• চুরি গিয়েছে ফুটপাত, আকাশ ঢেকেছে ত্রিপলে
    এই সময় | ২৭ জুন ২০২৪
  • অশীন বিশ্বাস, পানিহাটি

    শহরের প্রাণকেন্দ্র যেন আস্ত জতুগৃহ। বেনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সোদপুরে। চুরি গিয়েছে ফুটপাথ। রাস্তার দু'পাশ বেআইনিভাবে দখল করে চলছে দেদার ব্যবসা। বিপজ্জনকভাবে দোকানের উপরে সোদপুর ব্রিজের সঙ্গে দড়ি দিয়ে টানটান করে বেঁধে প্লাস্টিকের ছাউনি করা হয়েছে। রাস্তার দু'দিক থেকে ফুটপাথ দখল হয়ে যাওয়ায় আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি যাওয়ার জায়গাটুকুও নেই।সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর কলকাতার বিভিন্ন ফুটপাথ জবরদখল মুক্ত করার প্রয়াস শুরু হলেও সোদপুরের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এ বার কি সোদপুর স্টেশন রোড দখলমুক্ত হবে? যদিও পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায় বলেন, 'একটা ক্ষমতাবান গোষ্ঠী যেমন আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, তেমনই কোনও ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর মদতেই সোদপুর জুড়ে বেআইনি ভাবে ফুটপাথ দখল, গুমটি দোকানকে ঘিরে প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের রমরমা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন তখন পুলিশকে বলব কড়া ব্যবস্থা নিতে। পুরসভার তরফে সহযোগিতা করব।'

    যদিও পুরপ্রধানের আশ্বাসবাণী কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান নাগরিকরা। সোদপুরের বাসিন্দাদের মনে আজও দগদগে ২০০৮ সালে সোদপুর স্টেশন রোডের একটি প্রখ্যাত জামাকাপড়ের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি। সেই ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন ১২ জন। বছর কয়েক আগে সোদপুর ট্র্যাফিক মোড় থেকে স্টেশন রোডে ঢালাই রাস্তা চওড়া করার পাশাপাশি দু'ধারে চওড়া ফুটপাথ বানানো হয়।

    স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথায়, ফুটপাথে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যায়নের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সব গল্পকথা হয়েই রয়ে গিয়েছে। গাছের পরিবর্তে ফুটপাথ দখল করে বসে আছেন হকাররা। পরিস্থিতি এমন যে স্থায়ী দোকানগুলিকেই আর দেখা যায় না হকারদের দোকানের আড়ালে।

    লোকসংস্কৃতি ভবনের সামনে আবার ড্রেনের উপর নির্মিত ফুটপাথে পাকাপাকি ভাবে টিনের গুমটি ঘর বানিয়ে বসে পড়েছেন হকাররা। সোদপুর ব্রিজের দু'পাশের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। ব্রিজের নীচের অংশে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দোকান ও দু'পাশ বরাবর টিনের গুমটি করে মুখোমুখি বসে হকাররা৷ দোকানের উপরের প্লাস্টিকের ছাউনি ব্রিজের সঙ্গে টানটান করে বাঁধা।

    আবার কোথাও ব্রিজের রেলিং ঢাকা পড়েছে টিনের আচ্ছাদনে। গাড়ি যাওয়া তো দূর অস্ত্, হাঁটাচলা করার জায়গাটুকুও নেই বললেই চলে। কোথাও হকারদের দেখাদেখি স্থায়ী দোকানদাররাও তাঁদের দোকানের সামনের ফুটপাথ দখল হওয়ার আশঙ্কায় পসরা নামিয়ে এনেছেন ফুটপাথে।

    সূত্রের খবর, অনেক হকার আবার ফুটপাথ দখল করে মাসিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যকে ভাড়ায় দিয়ে দিব্যি টাকা রোজগার করছেন। স্থায়ী দোকানদের কথায়, তাঁদের দোকানে কোনও ক্রেতা গাড়ি নিয়ে কেনাকাটি করতে এসে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখলেই পুলিশ তাতে কেস দিচ্ছে। ফলে একদিকে হকারদের চাপ, আর একদিকে পুলিশের চাপে তাদের ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়।

    প্রশ্ন হলো, কেন এই বেআইনি দখলদারদের রমরমা? স্থানীয়দের কথায়, প্রভাবশালীদের মদত ছাড়া এ সব সম্ভব নয়। বাসিন্দাদের কথায়, 'আমরাই ভোট দিয়ে জেতাব, আবার আমাদেরই সমস্যায় পড়তে হবে! এটা বন্ধ হওয়া দরকার৷' সোদপুর স্টেশন রোড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দাস এবং স্নেহাশিস ঘোষ চৌধুরী বলেন, 'আমরা হকারদের বিরুদ্ধে নই। তবে যে ভাবে স্থায়ী দোকানগুলির সামনের ফুটপাথ জবরদখল করে হকাররা বসে পড়ছেন তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাদের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া হোক এবং নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত তাদের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হোক।'

    বিষয়টি নিয়ে তারা এর আগে একাধিকবার পুর ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিলেও তা গুরুত্বই পায়নি বলে খেদোক্তি প্রকাশ করেছেন। মুখে কুলুপ পূর্ত দপ্তরের ব্যারাকপুর ডিভিশনের কর্তাদের।
  • Link to this news (এই সময়)