• রুটি রুজি ফুটপাথের হোটেল, কী বলছেন রাগী মাসি-সাগর-নন্দিনীরা?
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৪
  • সুকৃতি ভট্টাচার্য, দেবদীপ চক্রবর্তী। এই সময় ডিজিটালফুটপাথ দখলমুক্ত করতে হবে। এই একটি সিদ্ধান্ত রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তাঁদের। ফুটপাথের ধারে এক চিলতে পাইস হোটেলের উপার্জনেই সংসারের হাল টানেন তাঁরা। ডাল-ভাত-ঝোলের অন্তরালেই রয়েছে তাঁদের নিরন্তর বেঁচে থাকার লড়াই। সুস্বাদু খাবার আর আতিথেয়তাই জীবন সংগ্রামের সকল বাধা টপকে লাইম লাইটে নিয়ে এসেছে তাঁদের। ফুড ব্লগারদের সৌজন্যে আজ তাঁরা প্রত্যেকেই ‘ভাইরাল’। তবে, ফুটপাথ ‘সাফাই অভিযান’-এ কী হবে তাঁদের? নাওয়া-খাওয়া ভুলে নন্দিনী দিদি, রাগী মাসি, সাগরদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সেই চিন্তাই।

    শহরের এক কোণায় ফুটপাথ জুড়ে থাকা হোটেলই তাঁদের কর্মস্থল। নিউটাউনে আকাঙ্খা মোড়ে ‘নন্দিনীদির হেঁশেল’ হোক বা রাসবিহারি থেকে গড়িয়াহাট যাওয়ার পথে সাগরের হোটেল, ইউটিউবের দৌলতে তাঁদের জনপ্রিয়তা নামী রেস্তরাঁকেও লজ্জা পাইয়ে দেবে। বাঁশের খাঁচার উপর ত্রিপল খাটিয়ে বা টিনের শেড দিয়ে ঝুপড়ি হোটেলে লাইন লেগে যায় খাওয়ার জন্য। সকালে ধূপ-ধুনো দিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি চলে সারাদিন, দিনের শেষে যাতে ক্যাশ বাক্সে কটা টাকা জমা পড়ে। ছেঁকে ধরা ব্লগাদের ক্যামেরার ঝলকানি, খদ্দেরের উপচে পড়া ভিড়, খাবারের প্রশংসা, আন্তরিকতা, হইচই, সবশেষে দু’পয়সা উপার্জন। চলছিল ভালোই। কিন্তু, গত দু-তিনদিনে চিত্রটা পালটে গেলে মুহূর্তের মধ্যে।

    ‘গণেশ উল্টানো’র আশঙ্কায় রয়েছেই সকলেই। নন্দিনী দিদি বলছেন, ‘দোকানটা উঠে গেলে আগামী দিনে আমরা খাব কী? কোথায় যাব? এই দোকানই তো আমাদের সব। আমাদের দিকটাও একবার ভাবা উচিত।’ বৃহস্পতিবার সরকারি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এক মাস হকার উচ্ছেদ বন্ধ করা হবে। বিকল্প ব্যবস্থার জন্য গড়া হয়েছে কমিটি। নন্দিনী বলেন, ‘এক মাসে নতুন করে কোনও জায়গা আমাদের পাওয়া সম্ভব? অন্তত ছয় মাস সময় দিলেও নয় হতো। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই আমাদের ভালো চাইবেন। সরকার থেকে আমাদের যদি কিছু ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় সেই আবেদন রাখব।’

    পুলিশের নির্দেশ আসার পর বুধবার সকাল থেকেই পাত্তাড়ি গোটাতে শুরু করেছেন সাগরও। সাগর বলেন, ‘প্রশাসন ভালো কিছু করার জন্যেই এটা করছে। আমরা নেগেটিভ দিক না দেখে পজিটিভ দিকটা দেখি। মুখ্যমন্ত্রী এটা ভালোর জন্যেই করছেন, যাতে পরবর্তীকালে আমরা আরও গুছিয়ে দোকানটা করতে পারি। এটাই ওঁর হয়তো পরিকল্পনা।’

    প্রায় পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি হোটেল চালাচ্ছেন রাগী মাসিও। পুলিশের কড়া নির্দেশ এসেছে তাঁর কাছেও। দোকানের শেডের যেটুকু অংশ, তার মধ্যেই সমস্ত জিনিস রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাইরে রাস্তার ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা চলবে না। রাগী মাসি বলেন, ‘একমাস সময় দিয়েছে ভালো। সকলের যা হবে আমারও তাই হবে। অনেকের কাছ থেকে মাসিক টাকা নেওয়া আছে। হোটেল বন্ধ করলে তো চলবে না। অল্প করে রান্না করে চালাচ্ছি।’

    উচ্ছেদ বন্ধ রেখে বেআইনি দখলদারি নিয়ে রাজ্য জুড়ে সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী। কাউকে বেকার করে দেওয়ার কোনওরকম বাসনা নেই বলেই সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফুটপাথ দখলমুক্ত হোক, হকাররাও করে খাক তবে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার বেষ্টনীতে থেকে। তবে, অল্পদিনেই বিখ্যাত হওয়া এই পাইস হোটেলগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, তার উত্তর দেবে সময়।
  • Link to this news (এই সময়)