খাল বিল, নদী নালা, পুকুরে অযত্নে বেড়ে ওঠা কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে হস্তশিল্পের নজরকাড়া পণ্য। আর সেই সব পণ্যের চাহিদাও রয়েছে বিদেশের বাজারে। বাংলায় অতি পরিচিত জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা। খাল বিল পুকুর ডোবার মতো জলাশয়ে দেখা যায় এই উদ্ভিদকে। কচুরিপানার ফুল দেখতে বেশ সুন্দর হলেও, এই উদ্ভিদ তেমন কোনও কাজে আসে না। তবে এবার সেই কচুরিপানা থেকেই হুগলির ব্যান্ডেল ত্রিকোণ পার্ক এলাকায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প।কচুরিপানা দিয়েই তৈরি হচ্ছে সৌখিন সামগ্রী। মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য এই জলজ উদ্ভিদকে শুকিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সৌখিন ব্যাগ, ফাইল, পেনদানি, ডাইনিং ও যোগা ম্যাট। যার মূল্য ৫০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই প্রসঙ্গে, মহিলা হস্তশিল্পী শর্বরী কুণ্ডু বলেন, 'জল থেকে তুলে এনে রৌদ্রে শুকনো হয়। এরপর তাকে বাছাই করে সরু ও মোটা কচুরিপানা আলাদা করা হয়। তারপর বুনোটে ফেলে তৈরি করা হয় বিভিন্ন সামগ্রী। সংসারের সমস্ত কাজ সেরে তারপর আমরা এই কাজে আসি। মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা উপার্জন হয়। আগামীদিনে অন্যান্য মহিলারাও এই কাজে এগিয়ে আসুক।'
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পক্ষে তাপসকুমার বৈদ্য বলেন, 'আমাদের পাশে রয়েছে সরস্বতী নদী। সেই নদী থেকেই আমরা কচুরিপানা সংগ্রহ করি। তারপর বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি করি আর্দ্রতা মুক্ত সামগ্রী। কচুরিপানা দিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী তৈরি হয়। নাবার্ডের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করেছি আমরা। আগামী দিনে আমাদের এই পরিবেশবান্ধব সামগ্রীগুলি এক্সপোর্ট করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, ভারতবর্ষের বাইরেও যাতে এই সমস্ত সামগ্রী পাঠানো যায় সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছ।'
তাপস জানান, এই বছর আমেরিকায় বেশকিছু হস্তশিল্প সামগ্রী স্যাম্পেল পাঠানো হয়েছে। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নাবার্ডের তরফেও বিভিন্নভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। আগামীদিনে এই সমস্ত সামগ্রী জাপান ও ইন্দোনেশিয়াতেও পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এখানকার শিল্পীরা দেরাদুন, চণ্ডীগড় সহ একাধিক রাজ্যে নিজেদের পসরা নিয়ে গিয়েছেন। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত ৬০ জন মহিলা কাজ করে চলেছেন। এক্ষেত্রে আগামীদিনে সরকারি বা বেসরকারিভাবে সাহায্য পেলে আরও বেশি করে রফতানি করার চেষ্টা করা হবে বলে জানানো হয়েছে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফে।