কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় রাস্তা বা ফুটপাথ দখল করে বেআইনি ভাবে কিছু দখলদার ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে সম্প্রতি একটি বৈঠকে মন্তব্য করেছিলেন স্বয়ং মমতা। ভর্ৎসনা করেছিলেন প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের। সেই ধমকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছিল উচ্ছেদ। নেমেছিল বুলডোজ়ার। যা বৃহস্পতিবার সকালেও চলেছে। পরে দুপুরে হকারদের প্রতিনিধি-সহ প্রশাসনকে নিয়ে নবান্নে একটি বৈঠক করেন মমতা। সেখানে তিনি জানিয়ে দেন, বুলডোজ়ার দিয়ে দোকান ভাঙা তাঁর রাজ্যের সংস্কৃতি নয়। যে ভাবে বুলডো়জ়ার দিয়ে দখলমুক্তি অভিযান চলছে, তা দেখতেও ভাল লাগছে না। কিন্তু ঝকঝকে নিউ টাউনের রাস্তায় ঝুপড়ি দোকানও দেখতে ভাল লাগছে না। মমতা বলেন, ‘‘আমি কাউকে বেকার করে দিতে চাই না। সেই অধিকার আমার নেই। কারও ব্যবসা বন্ধ হোক, তা-ও চাই না। হকার উচ্ছেদ আমার লক্ষ্য নয়। তবে এক এক জন হকার চারটে করে ডালা নিয়ে রাস্তাঘাট দখল করে বসে থাকবে, বেআইনি ভাবে পার্কিং লট তৈরি করে টাকা তোলা হবে, এটাও মেনে নেওয়া যাবে না। গড়িয়াহাটে হাঁটার জায়গা নেই। গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে হকারদের ডালায় ভরে গিয়েছে। ওখানে দেশ-বিদেশ থেকে তারকারা আসেন। হঠাৎ কিছু হলে কী করব? কে ঝুঁকি নেবে? তখন তো এখানে এনআইএ পাঠিয়ে দেবে।’’ মমতা জানিয়ে দেন, রাস্তাঘাট সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন হতে হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা, অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থার কথাও মাথায় রাখতে হবে।
নবান্নের ওই বৈঠকে মমতা ডেকেছিলেন হকারদের বিভিন্ন সংগঠনকেও। তাঁরা মমতার কাছে বেআইনি দখলমুক্তির জন্য তিন মাস সময় চান। জবাবে মমতা বলেন, ‘‘আমি কমিটি তৈরি করেছি। সার্ভে করতে বলছি। ওদের সেই কাজ করতে এক মাস মতো সময় লাগবে। আপনারা তার মধ্যেই গোছাতে আরম্ভ করুন। এক মাস সময় দিলাম। পুজোর আগেই এটা করে ফেলতে হবে।’’
বেআইনি দখল রুখতে এবং রাস্তাঘাটের সৌন্দর্যায়নের জন্য কয়েক দফা পরামর্শও দেন মমতা।
লোভ সংবরণ
ফুটপাথের দখলদারির জন্য আদতে দায়ী এলাকার নেতা, কাউন্সিলর এবং পুলিশ। এঁরা প্রথমে ফুটপাথে ডালা বসিয়ে দেন। তার বিনিময়ে মাসে মাসে চাঁদা নিতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশ, হকার নেতারা গরিব হকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। আপনারা লোভ সংবরণ করুন। জীবনধারণের জন্য যেটুকু দরকার, সেটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকুন। আপনারাই ডেকে এনে বসাবেন, তার পরে তাঁদের উপর বুলডোজ়ার চালাবেন? সেটা করলে হবে না।’’ পুলিশের লোভ বেড়ে গিয়েছে। কাউন্সিলরেরা এলাকা দখল করছেন। তাঁরা বিষয়গুলি দেখেও দেখছেন না। যে সমস্ত কাউন্সিলরের এলাকায় জবরদখল হবে, তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। পুলিশ ইন্ধন দিলে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে।
কত হকার? কত বাজার?
রাজ্যে কত হকার আছে, হিসাব দিতে হবে। প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ, রাজ্যের সমস্ত বড় বড় বাজারের সংখ্যা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে এবং সেই সমস্ত বাজার এলাকার ‘প্ল্যান’ তাঁকে দিতে হবে। ‘বিপজ্জনক’ বাজার এলাকাগুলির সংস্কার করতে হবে। কোনও রাস্তা বানানোর পর পাঁচ বছর না চললে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। বিপজ্জনক বাড়ি না-সারালে অধিগ্রহণ করা হবে।
পুনর্বাসন, আলাদা জ়োন
হকারদের জন্য আলাদা করে বাড়ি বানিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। সরকারের এই প্রকল্প রয়েছে। তা ব্যবহার করতে হবে। ধর্মতলা এবং নিউ মার্কেট চত্বরে বহুতল বানিয়ে তাঁদের রাখা যায় কি না, দেখতে হবে। দরকারে হকারদের পণ্য মজুত করার বাড়িও বানানো যাবে। অদাহ্য পদার্থ দিয়ে দোকানঘর বানিয়ে হকার্স জ়োন করতে হবে। প্রতিটি ঘরের একটি করে নম্বর থাকবে। হকারপিছু একটি করে দোকান দেওয়া হবে। দোকানঘরের রং হবে আকাশি। যা ‘রাজ্যের রং’। সরকারের তরফে এই খরচ করা যেতে পারে।
বেআইনি পার্কিং নয়
কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় সমস্ত বেআইনি পার্কিং ভাঙতে হবে। কোনও পার্কিংকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে করা যেতে পারে। তবে তা প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে। টাকা তোলার জন্য পার্কিং চালানো যাবে না।