চিকিৎসায় গাফিলতি ও রোগীর আত্মীয়দের মারধরের অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম কর্মীদের উপরেও চড়াও হওয়ার অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রায়গঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। এরপর নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি।জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে দেড় বছরের একটি শিশুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, অসুস্থ শিশুটিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেখে মহিলা শল্য বিভাগে ভর্তি করাতে বলেন। সেই মোতাবেক মহিলা শল্য বিভাগে অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তাররা কার্যত চিকিৎসায় গাফিলতি করেন এবং ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে ব্যস্ত থাকেন। বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পরেও চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের শিশুটিকে দেখার জন্য বলেন রোগীর আত্মীয়রা। আর তখনই জুনিয়র ডাক্তাররা শিশুটির পরিবারের লোকজনের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। যার জেরে উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন অসুস্থ শিশুটির পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এবং স্থানীয় কো-অর্ডিনেটর তথা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী চৈতালি ঘোষ সাহা। জুনিয়র ডাক্তাররা রোগীর আত্মীয়দের পাশাপাশি চৈতালি ঘোষ সাহাকেও মারধর ও হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি এই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মারমুখি জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে হেনস্থার শিকার হন সংবাদমাধ্যম কর্মীরাও। ঘটনায় কার্যত ধুন্ধুমার লেগে যায় মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রায়গঞ্জ থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
অসুস্থ শিশুটির বাবা রাজা মণ্ডল জানান, তাঁর দেড় বছরের সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাঁরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রথমে জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে দেখালে, তাঁকে মহিলা শল্য বিভাগে ভর্তি করার কথা বলা হয়। সেই মোতাবেক মহিলা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুটিকে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তাররা দ্রুত চিকিৎসা না করে ক্রিকেট খেলা দেখায় ব্যস্ত থাকেন। বেশ কিছুক্ষণ পরেও চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন তাঁরা। অভিযোগ, তারপরই হঠাৎ করে জুনিয়র ডাক্তাররা এসে তাঁদের ওপর চড়াও হন এবং মারধর শুরু করেন। এমনকী মহিলাদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় চৈতালি ঘোষ সাহাও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'একটি অসুস্থ শিশুকে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলে, জুনিয়র ডাক্তার চিকিৎসা না করে মোবাইলে খেলা দেখছেন। তাঁদের চিকিৎসার কথা বলা হলে ইউনিয়ন ডেকে রোগীর আত্মীয়দের উপরে চড়াও হন ও মারধর করেন। মহিলাদেরও রেয়াত করা হয়নি।' ঘটনায় তাঁকেও শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ চৈতালির।
এদিকে এই ঘটনায় রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বিপ্লব হালদারের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তিনি তেমন কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। বিপ্লব জানান, এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না, যা বলার তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবে। এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।