• পথচারীরা রাস্তায়, পাইস হোটেলের বিরিয়ানিতে বন্ধ পথ
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৪
  • দেবাশিস দাস

    সন্ধ্যা নামলেই ফুটপাথের লাগোয়া মেন রাস্তায় ভ্যানে চেপে আনা হচ্ছে জেনারেটর। সেখান থেকে লাইন চলে যাচ্ছে একের পর এক ডালা কিংবা স্টলে। দিনের বেলা ফুটপাথের একাংশ দখল করে গজিয়ে উঠেছে হোটেলও। পরিস্থিতি এমন যে, খাবার টেবিল, আর রান্নার জায়গার মধ্য দিয়েই কোনওক্রমে যাতায়াত করতে হয় সাধারণ মানুষকে।ফুটপাথের উপরেই একের পর এক স্থায়ী কাঠামোর দোকানে চপ থেকে বিরিয়ানি। শাড়ি থেকে টিপ। গৃহস্থালির এ টু জেড। পাঠকপাড়া, বেহালা বাজার, ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, ম্যান্টন সহ ডায়মন্ড হারবার রোডের দু'ধারের ফুটপাথ হকারদের সৌজন্যে হয়ে উঠেছে সব পেয়েছির দেশ। সেখানকার ফুটপাথে মানুষের চলাচলের জন্য রয়েছে জমির আলের মতো এক টুকরো জায়গা।

    বেহালা বাজার সংলগ্ন এলাকার হকার সনাতন মণ্ডলের কথায়, 'হকারি করার জন্য অনেক নিয়ম আছে। তবে নিয়মিত দলের মিটিং-মিছিলে গেলে, পুলিশের দাবি মতো টাকা এবং দলীয় তহবিলে নিয়মিত চাঁদা দিলে আর কোনও নিয়ম মানতে হয় না।' ১৪ নম্বর বাস স্ট্যান্ডের ফুটপাথেই খাবারের দোকান মিনু সাহার।

    তিনি বলেন, 'এলাকার নেতা, দাদারা আমাদের পাশে আছেন। দোকান চালাই। ওদের মুখের কথাই এখানে নিয়ম। তবে পুলিশকেও সন্তুষ্ট রাখতে হয়।' মুখ্যমন্ত্রী ফুটপাথের হকার সমস্যা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করার পরে বুধবার অজন্তা সিনেমা হল থেকে বেহালা থানা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালায় পুলিশ।

    বেহালার সিপিএম নেতা কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় বলেন,'পুলিশের অভিযানে বৈধ হকারের স্টলও ভাঙা পড়ছে। অথচ শাসকদলের একের পর এক দলীয় কার্যালয় অটুট রয়েছে। আসলে পুলিশকে পয়সা দিলে বেহালার ফুটপাথে সব করা যায়।' বেহালার ফুটপাথে স্থায়ী কাঠামো দিয়েই চলছে হকার রাজ। যত্রতত্র ঝুলছে ইলেকট্রির তার। বিপজ্জনক সেই তারের বিভিন্ন অংশ জোড়া হয়েছে ব্ল্যাক টেপ দিয়ে। দোকানিদের যুক্তি, এইভাবেই বছরের পর বছর চলছে।

    মেট্রোর বেহালা ট্রাম ডিপো কিংবা তারাতলা স্টেশনে নামার পরে বাইরে এলে ফুটপাথ ধরে হাঁটার জো নেই যাত্রীদের। সকলে সরাসরি নেমে পড়েন ডায়মন্ডহারবার রোডে। যে কোনও দিন সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভবনাও প্রবল। শহরের অন্যান্য এলাকার মতোই বেহালার ফুটপাথেও পুরসভার তরফে হাল্কা টিনের ছাউনি দিয়ে হকারদের জন্য স্টল করে দেওয়া হয়েছে।

    কিন্তু পুরসভার নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই স্টলের চারধার কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো। কলকাতা পুরসভার টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য এবং বেহালা অঞ্চলের হকার নেতা, তৃণমূলের শক্তি মণ্ডল বলেন, 'কিছু হকার নিয়ম মানছেন না। আমরা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছি নিয়ম মেনে চলতে হবে। এরপরে কেউ না শুনলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তাঁর কথায়, 'মূল কলকাতার ফুটপাথের চেয়ে বেহালার ফুটপাথ অনেকটা ছোট। তাই সমস্যা হয়।'
  • Link to this news (এই সময়)