ফুটপাথ তো নয়, যেন আস্ত দোকান! কোথাও রেস্তোরাঁ, কোথাও ফার্নিচারের শোরুম, কোথাও গাড়ির শোরুম থেকে ওয়ার্কশপ, কোথাও আবার ছোট ছোট গুমটি করে চলছে দেদার ব্যবসা। কেউ কেউ আবার দখলি অংশে থাকার পাকাপাকি জায়গাও করে নিয়েছেন। সরকারি টাকা খরচ করে বিটি রোডের দু’ধারে বানানো ফুটপাথের এখন এমনই অবস্থা।জবরদখল এতটাই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে যে ফুটপাথের কোথায় শুরু, কোথায় শেষ সেটিও চট করে বোঝার উপায় নেই।বরাহনগরের সিঁথির মোড় থেকে ডানলপ, কামারহাটি, সোদপুর, খড়দহ হয়ে টিটাগড় পর্যন্ত বিটি রোডের দু’ধারের ফুটপাথ তো বটেই, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটু একটু করে সার্ভিস রোডেরও একটা বড় অংশ এখন দখল হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু কেন এত রমরমা বেআইনি দখলদারদের?
সরকারি জায়গায় দখল করে ব্যবসা করা হকারদের থেকে সরকার কি কোনও সুবিধা পায়? উত্তর, না। উল্টে তাদের দোকানের আবর্জনা প্রতিদিন স্থানীয় পুরসভাকেই পরিষ্কার করতে হয়। কামারহাটি মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সুমন শিকদার নামে এক মাঝবয়সি ব্যক্তি বললেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মদত ছাড়া কি এ সব সম্ভব?’
পিছনে আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভুক্তভোগী স্থানীয়রা। কামারহাটি মোড়ের কাছে ফুটপাথ দখল করে থাকা এক হকারতে প্রশ্নটা করতেই তিনি প্রথমে মুখ লুকনোর চেষ্টা করেন। পরে অবশ্য নাম না লেখার শর্তে বললেন, ‘আমাদের মাস মাইনে দিতে হয়!’ কিন্তু কাকে? সেটা অবশ্য ভাঙলেন না ওই হকার।
কামারহাটি, সোদপুর এবং টিটাগড়ে ফুটপাথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রথতলা মোড়ের পর থেকে কামারহাটি মোড় পর্যন্ত ফুটপাথ প্রায় পুরোটাই বেদখল। গায়ে গা ঘেঁষেই নতুন, পুরোনো ফার্নিচারের দোকান৷ কোথাও আবার গাড়ি সারাইয়ের দোকান। ফুটপাথে দোকান রেখে নীচে সার্ভিস রোড দখল করে চার চাকা গাড়ি সারানোর কাজে ব্যস্ত মেকানিকরা।
সোদপুরে ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর। বিটি রোডের দু’পাশে খুলেছে একের পর এক নামীদামি রেস্তোরাঁর আউটলেট। গোটা ফুটপাথ জুড়ে রয়েছে ছোট ছোট হোটেল, খাবারের দোকান। ফুটপাথের উপরে দোতলা রেস্তোরাঁ বানিয়ে নীচে রান্নার ব্যবস্থা এবং উপরে বসে খাওয়ার জায়গা। কিছু কিছু ব্যবসাদার আবার দোকানের সামনের অংশ বরাবর ফুটপাথের দু’পাশ ঘিরে নিয়েছেন।
বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ওই দোকানগুলির সামনে মানুষ, ফুড ডেলিভারি বয়দের ভিড়ে সার্ভিস রোড তো বটেই, এমনকি বিটি রোডের কিছু অংশও দখল হয়ে যায়। ফলে বিটি রোডে যান চলাচলের গতি ধীর হয়ে যায়। বাড়ছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। কুহেলি পাত্র নামে পথচারী এক মহিলা বলেন, ‘এখানে ফুটপাথ থেকেও নেই। দখল হয়ে গিয়েছে সার্ভিস রোডও। বাধ্য হয়ে বিটি রোড দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। আমার প্রাণের আর কী মূল্য! নেতাদের পকেট ভরলেই হলো।’
স্থানীয় বাসিন্দা রণয় ঘোষ বলেন, ‘প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি।’ ব্যস্ততম ডানলপ মোড়েও একই অবস্থা। বিটি রোডের দু’পাশের ফুটপাথের পুরোটাই দখল। কিছু অংশে বহু পুরোনো কিছু হকার থাকলেও নতুন করেও অনেক হকার তার দখল নিয়েছে। আলমবাজারের দিকের অংশে বছর খানেক আগে দোকান নেওয়া এক হকার বলেই দিলেন, ‘শুধু এককালীন কিছু টাকা দিয়ে নয়, মাসিক কিস্তিতেও ব্যবসা করার জন্য টাকা দিতে হয়। যদি দোকান তুলে দেয় আমরা কী করব?’
খড়দহ, টিটাগড়েও রাস্তার দু’পাশ জুড়ে শুধুই বেআইনি দখলদার। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘ধাপে ধাপে বিটি রোডের সমস্ত দখলদারি সরানো হবে। পুলিশেরও যদি কিছু থাকে সেটাও সরানো হবে। সমস্ত পুরসভার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।’