কাটোয়া পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডে বাস করেন এক লক্ষের বেশি মানুষ। প্রতি বছরই শহরের জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। নদিয়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার সঙ্গে নৈকট্যের কারণে এই শহর বাণিজ্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সকাল থেকেই শহরে ব্যবসার কাজে বহু মানুষের সমাগম হয়। শহরের বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে কাছারি রোড, স্টেশন রোড, সার্কাস ময়দানের আবাসন পাড়া, পালিটা রোড, টেলিফোন ময়দানে ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু, ওই সব এলাকায় রাস্তাগুলির ফুটপাত বলতে কিছুই নেই। সবই জবরদখল হয়ে গিয়েছে। ফলে ফুটপাতের ভিড় নেমে আসে রাস্তায়। থমকে যায় যানবাহন।
মাধবীতলা হয়ে টেলিফোন ময়দান এলাকায় ফুটপাত জবরদখল করা হয়েছে। ফুটপাতের উপরে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় তৈরি হয়েছে। শহরের সব থেকে ব্যস্ততম এলাকা গোয়েঙ্কা মোড়। সেখানে ট্র্যাফিক সিগন্যালের সামনে দুই প্রান্তে টিন দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে দুই দলের শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়। এর ফলে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। স্টেশন বাজার চৌরাস্তা থেকে শুরু করে কাছারি রোড সংহতি মঞ্চ পর্যন্ত, সুবোধ স্মৃতি রোড ও সার্কাস ময়দানে কোথাও রাস্তার দু’ধারে আবার কোথাও এক পাশে প্রায় এক ফুট উচ্চতার ফুটপাত করা হয়েছিল পথচারীদের সুবিধার জন্য। ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ জায়গাতেই দখল হয়ে গিয়েছে ফুটপাত। পথচারীরা হাঁটছেন পিচের রাস্তা ধরে। সাকার্স ময়দান আবাসন এলাকায় রাস্তা দখল করে সারি দিয়ে প্রচুর গুমটি বসানো হয়েছে। সেখানে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ও তৈরি করা হয়েছে।
রাস্তা-ফুটপাথ দখল করে গুমটি তৈরির নালিশ যেমন রয়েছে, তেমনই ফুটপাতে দোকান করে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রির অভিযোগও উঠেছে কিছু এলাকায়। শহর জুড়ে একের পর এক পুকুর বোজানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই জায়গায় বেআইনি বহুতল নির্মাণ করা হয়েছে। টোটোর সংখ্যা লাগামহীন ভাবে বাড়লেও পুরসভার হেলদোল নেই। শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও অনুন্নত। সামান্য বৃষ্টিতেই নানা জায়গায় জল জমে। এ সব অভিযোগ শোনা যায় শহরের অনেক এলাকায়। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য সে সব মানতে চাননি।
কাটোয়া শহরের বাসিন্দা অনিল ঠাকুর বলেন, “জল সরবরাহ, আলো, বর্জ্য সংগ্রহের মতো বেশ কিছু নাগরিক পরিষেবায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে, রাস্তাঘাট জবরদখলের জেরে শ্বাসরোধকারী পরিবেশ তৈরি হয়েছে শহরে। কাছারি রোড, টেলিফোন ময়দান, সার্কাস ময়দান দিয়ে হাঁটা দায়। ফুটপাত জবরদখল হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে আমাদের মতো প্রবীন বাসিন্দাদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। এ দিকে নজর দেওয়া উচিত পুরসভার।”
কাটোয়ার পুরপ্রধান, তৃণমূলের সমীরকুমার সাহা বলেন, “নাগরিক পরিষেবায় কোনও ঘাটতি নেই। নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সভা থেকে ফিরেই আমি পুর-প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে জানিয়েছি, পরিষেবার সঙ্গে কোনও আপস করা যাবে না। তবে ফুটপাত জবরদখল মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করব। শহরের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ করা হবে। অন্য অভিযোগগুলি ঠিক নয়।”
কাটোয়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “কাটোয়া শহরে পুর-পরিষেবার মান খুবই ভাল। কোথাও আবর্জনা জমে থাকে না। গত ৩০ বছর ধরে আমরা মানুষের ভালবাসা নিয়ে কাটোয়া পুরসভা পরিচালনা করছি। তবুও পরিষেবার মান আরও উন্নত করার জন্য পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলব। ফুটপাত পথচারীদের জন্য ছেড়ে রাখা উচিত।”