একাধিক পুর পরিষেবায় খামতি, বেআইনি নির্মাণ, দখলদারি-সহ নানা বিষয়ে সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভপ্রকাশের পরের দিনই তৎপর হয় রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা। সোমবার পরিচ্ছন্নতার নিরিখে খারাপ শহরের তালিকায় জেলা সদর সিউড়ির নাম উঠে আসার পরে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা চোখে পড়েছিল জেলা সদরেই। মঙ্গলবার পরিচ্ছন্নতায় নজর দেওয়ার পরের দিন বুধবার থেকেই অবৈধ দখলদারির বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানে নামে পুরসভা। এ দিন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের সামনে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযানে শুরু করে পুরসভা।
এ দিন সকাল হাসপাতালের সামনে অবৈধ ভাবে যে সব দোকানদার ব্যবসা করছিলেন, তাঁদের সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। আর কয়েকটি অবৈধ নির্মাণ পে-লোডার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। সকাল ৮টা থেকে অভিযান শুরু হয়ে যায়। কিন্তু জেলার অন্য জায়গার মতো এ ভাবে উচ্ছেদ নিয়ে সিউড়ি শহরেও প্রতিবাদ শুরু হয়। বিরোধিতায় নামে বিজেপিও।
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিজেপি রাজ্য সধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা, সহ সভাপতি বাবন দাস-সহ বেশ কয়েক জনের প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বিজেপির দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় হকার উচ্ছেদ আইন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। হকার্স কর্নার বানাতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটা করতে হবে। অন্য দিকে, ‘অল বেঙ্গল হকার্স ইউনিয়ন’ (এসইউসিআই প্রভাবতি) সিউড়ি শাখার সদস্যেরা একই দাবি নিয়ে মিছিল করে এসডিপিও-র কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
এ দিন ধ্রবের কটাক্ষ, ‘‘উচ্ছেদ করা হচ্ছে পুরসভার কাউন্সিলরদের আরও কাটমানি পাইয়ে দেওয়ার জন্য।’’ জেলাশাসকের দফতর থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ সিউড়ি পুরসভার সামনে মূল রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ করে বিজেপি। তাতে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয়। যদিও তার মধ্যেই নবান্নের নতুন সিদ্ধান্তও চলে এসেছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে পরিষ্কার করে দেন, হকার উচ্ছেদের আগে তাঁদের এক মাস সময় দেওয়া হবে। তার আগে অবশ্য সমীক্ষা হবে। এলাকাভিত্তিক হকার্স জ়োন তৈরি হবে। এর পরেই আলোচনার ভিত্তিতে অবরোধ তুলে নেয় বিজেপি।
তবে হকার উচ্ছেদ বন্ধ হলেও দখলদারির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে জানিয়েছেন সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে কাজ হবে। হকারদের সময় দিতে বলা হয়েছে। হকারদের বিকল্প জমির জন্য জেলাশাসক আমাদের বলেছেন। আমরা খোঁজ করছি হকারদের কোথায় বসানো যায়। তবে বেআইনি নির্মাণ, সেগুলি নিকাশিনালার বা স্থায়ী দোকান বাড়িয়ে সরকারি জায়গা বা রাস্তা দখল করেছে সেগুলি ভাঙার কাজ চলবে।’’
একই দাবি করেছেন দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডেও। তবে উচ্ছেদ প্রশ্নে অন্য পুরসভার মতো প্রথম থেকে শক্তি প্রয়োগ না করে, একটু ভিন্ন পথে হেঁটেছে এই পুরসভা। বৃহস্পতিবার সকালে দুবরাজপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পাওয়ারহাউস মোড়ে পৌঁছন দুবরাজপুরের পুরপ্রধান, উপ পুরপ্রধান মির্জা সৌকত আলি ও অন্য পুরপ্রতিনিধিরা। অবৈধ দখলদারদের দু’দিনের সময় সীমা বেঁধে দিয়ে তাঁরা জানান, এর মধ্যে সরিয়ে না নিলে পে-লোডার দিয়ে সব ভেঙে দেওয়া হবে।
তবে দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশর পর দুবরাজপুরের পুরপ্রধান বলেন, ‘‘হকারদের সময় দেওয়া হবে। তবে যাঁরা স্থায়ী দোকান বাড়িয়ে রাস্তা দখল করেছেন, তাঁরা নিজেরা না সরলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’