বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় দশটা নাগাদ রানাঘাট স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা গেল, বৈদ্যুতিক উনুনে ফুটছে চায়ের জল। কোথাও আবার তৈরি হচ্ছে ডিম-টোস্ট। হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হলে দেখা যায় বৃষ্টির জল বৈদ্যুতিক তার চুঁইয়ে পড়ছে। এক ব্যবসায়ীর কথায়, "বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দিতে হয়। সবাই সব জানে। পেটের টানে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এ ভাবেই ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।" এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে জিআরপির গেট থেকে বাইরে বেরোলেই জিএনপিসি রোড। সেই রাস্তা ধরে কয়েক পা দক্ষিণে এগোলেই পুরসভার অস্থায়ী শৌচালয়। শৌচালয়ের পিছনে জীর্ণ দেওয়ালে টিনের বাক্সে রয়েছে বিদ্যুতের খান পাঁচেক মিটার। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, ওই মিটার থেকে প্ল্যাটফর্মের একাধিক দোকানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
সবটাই যে নিয়মবহির্ভূত ভাবে চলছে, তা স্বীকার করেছেন রেলের আধিকারিকরাও। রানাঘাট প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বোধিসত্ত্ব চক্রবর্তী বলেন, "যেভাবে প্ল্যাটফর্মে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে খাবারের দোকান চলছে, তাতে যে কোনওদিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে রেল ও রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা 'দায়' নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে নেমে পড়বে। মাঝখান থেকে সমস্যায় পড়তে হবে রেল যাত্রীদের।"
কী ভাবে প্ল্যাটফর্মে বিদ্যুৎ সংযোগ দিল রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা?
বিষয়টি নিয়ে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ দফতরের অধিকর্তা সুকান্ত মণ্ডল বলেন, "যেখানে ব্যবসায়ীদের দখল থাকে, সেখানে আপত্তি না থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বাধা নেই। এ ক্ষেত্রে রেলের 'আপত্তি নেই’ এমন শংসাপত্রের প্রয়োজন হয় না।" পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, "প্ল্যাটফর্ম শুধুমাত্র যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য। অন্য কারও নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।"
অধিকাংশ যাত্রীর দাবি, কয়েকজন রেলের আধিকারিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের আঁতাতেই এই অনিয়ম চলছে। তৃণমূলের রানাঘাট হকার সংগঠনের নেতা সুশান্ত সাহা বলেন, "যেহেতু হকারদের রুজি, রুটি জড়িয়ে রয়েছে প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্র করে। তাই রেলের আধিকারিকদের মৌখিক অনুমতিতেই বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছে।" সিপিএমের হকার সংগঠনের নেতা হীরক মুখোপাধ্যায় বলেন, "যেহেতু বিদ্যুৎ ব্যবহারে রেলের তরফে কোনও অনুমতি নেই। তাই আমাদের সংগঠনে যুক্ত কোনও হকার বা ব্যবসায়ী প্ল্যাটফর্মে বিদ্যুতের ব্যবহার করেন না।"
তবে সব কিছুর পরেও শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে তার উত্তর রেল ও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা কারও কাছেই মেলেনি।