• প্রশ্ন ফাঁসে ধৃত রাজ্যের দু’জন
    আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৪
  • প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে এ বার পশ্চিমবঙ্গেরও যোগসূত্র মিলল। বৃহস্পতিবার কৌশিক কর নামে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের এক ছাপাখানার মালিককে গ্রেফতার করেছে বিহার পুলিশ। সঞ্জয় দাস নামে আর এক ব্যক্তিও গ্রেফতার হয়েছেন। সূত্রের খবর, বিহার পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা জানতে পেরেছিল, সঞ্জীব মুখিয়া গ্যাংয়ের সঙ্গে যোগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তিন জনের। এর পরেই কৌশিকদের গ্রেফতারি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গানগরে গত কয়েক বছর ধরে ‘ব্লাসিং সিকিয়োর প্রেস’ নামে একটি ছাপাখানা চালাচ্ছিলেন কৌশিক।

    মধ্যমগ্রামের দোলতলা মোড়ের কাছে ওই ছাপাখানা। সেখানে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকেন। ছাপাখানা ছাড়া আরও কয়েকটি অফিসও রয়েছে সেখানে। ছাপাখানার দোতলায় সপরিবার থাকেন কৌশিক। ওই ছাপাখানায় অন্যান্য নথিপত্রের পাশাপাশি সরকারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ছাপা হত। এ ছাড়া কৌশিকের আরও একটি ছাপাখানা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, ‘ক্যালটেক্স মাল্টিভেঞ্চার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে কৌশিকের সেই সংস্থাকে বিহার পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা ও সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন ছাপা ও পৌঁছনোর বরাত কৌশিকের গঙ্গানগরের ছাপাখানাকে ‘আউটসোর্স’ করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। নিট কাণ্ডে কৌশিক-সঞ্জয় কতটা যুক্ত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।

    কৌশিকের গ্রেফতারির পরে তাঁর গঙ্গানগরের ছাপাখানার নিরাপত্তা আরও বেড়েছে। এ দিন কাউকেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং ২০২২ সালে অরুণাচলপ্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাতেও কৌশিকের নাম জড়িয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

    নিটের প্রশ্ন ফাঁসের তদন্তে ঝাড়খণ্ডের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহ-প্রধান শিক্ষককে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ওয়েসিস স্কুল নামে এই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক এহসানুল হক হাজারিবাগে নিট-ইউজি পরীক্ষার শহর-কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্বে ছিলেন। সহ-প্রধান শিক্ষক ইমতিয়াজ় আলমকে এনটিএ-র পর্যবেক্ষক ও ওয়েসিস স্কুলের কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পটনার একটি স্কুলে নিটের আধপোড়া প্রশ্নপত্র উদ্ধারের পরে বিহার পুলিশ জানিয়েছিল, ওয়েসিস স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকেই ‘সলভার গ্যাং’-এর হাতে ওই প্রশ্নপত্র পৌঁছেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে ইঙ্গিত মিলেছে। তবে এর নেপথ্যে কার হাত ছিল, তা স্পষ্ট নয়। প্রশ্নপত্রের বাক্স খোলার ক্ষেত্রেও এনটিএ-র নির্দেশকা মানা হয়নি। এহসানুল জানিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্রের বাক্সের ডিজিটাল লক কাজ না করায় এনটিএ তাঁকে ছুরি দিয়ে সেটি কাটতে বলেছিল।

    এর আগে মহারাষ্ট্রে লাতুর এবং বীড় থেকে দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জলিল পাঠান এবং সঞ্জয় যাদব নামে এই দু’জনের কাছে নিটের ১৪টি অ্যাডমিট কার্ড মেলে। তার মধ্যে একটি অ্যাডমিট কার্ড পটনার একটি স্কুলের। ফলে বিহারেও তঁদের যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিটে ৬৫০ নম্বর পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই দুই শিক্ষক পাঁচ লক্ষ টাকা করে চেয়েছিলেন। অগ্রিম হিসেবে ১৪ জন পরীক্ষার্থীর থেকে নিয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা করে। বলেছিলেন, ৬৫০-র কম পেলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা কেউই ৬৫০ পাননি। তার পরে কয়েক জনকে টাকা ফেরতও দিয়েছিলেন ওই দুই শিক্ষক।

    এ দিকে, তামিলনাড়ু বিধানসভা নিট বাতিলের দাবিতে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। ওই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে নিট বাতিল করা এবং রাজ্য সরকারগুলিকে দ্বাদশ শ্রেণির নম্বরের ভিত্তিতে মেডিক্যালে ভর্তি নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)