‘বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব অনুচিত’, দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি মমতার
প্রতিদিন | ২৯ জুন ২০২৪
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাম্প্রতিককালে কলকাতা হাই কোর্টে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। সেই সমস্ত নির্দেশিকার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমও। ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, “বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকা উচিত নয়।”
শনিবারের ওই অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “আমি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বলছি না, কাউকে আঘাতও করতে চাই না। তবে এটা বলতে চাই, বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকলে মানুষ কোথায় যাবে? বিচারব্যবস্থা আমাদের কাছে পবিত্র, মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারের মতো। সরকার বিচারব্যবস্থার সঙ্গে আছে। আমার অনুরোধ, বিচারব্যবস্থায় কোনওরকম রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকা উচিত নয়। বিচারব্যবস্থা সৎ এবং নিরপেক্ষ থাকা উচিত। বজায় রাখা উচিত গোপনীয়তাও।” মমতার এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে শুরু জোর আলোচনা। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “মমতার এই মন্তব্য ভিত্তিহীন। তাঁর মন্তব্য জনমানসে কোনও প্রভাব ফেলবে না।”
মমতা আরও বলেন, ‘‘আমাকেও নিজেদের পরিবারের সদস্য বলে মনে করুন। আমিও আইনের লোক। আমি তিন-চারটি কেস লড়েছি। আমি এখনও বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। আমরা বিচারব্যবস্থাকে উন্নত করতে হাজার কোটি খরচ করেছি। ৭০ একর জমি দিয়েছি। রাজারহাটে নতুন হাই কোর্টের জায়গা দিয়েছি।’’
মমতার পর বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। বলেন, “আদালতকে বলা হয় ন্যায় এবং বিচারের মন্দির। আমরা নিজেদেরকে সেই মন্দিরের দেবতা ভেবে ভুল করি। এটা খুব বিপদের। মনে রাখতে হবে আমাদেরও নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেই চিন্তাভাবনার সঙ্গে বিচারকে গুলিয়ে ফেললে হবে না।” প্রধান বিচারপতি সকলকে মনে করিয়ে দেন, ‘‘সাংবিধানিক নৈতিকতা বলে বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করো এবং সহনশীল হও। আমার সামনে আদালতকে কেউ মন্দির বললে আমি তাঁদের বাধা দিই। কারণ, মন্দির বললেই মনে হয় বিচারকরা দেবতা। কিন্তু তা নয়, বিচারকরা মানুষের সেবক।” প্রধান বিচারপতির পরামর্শ, “বিচারকেরা বিচার করুন কিন্তু অন্যের সম্পর্কে আগেভাগে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। সহানুভূতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরাও মানুষ।’’