• ‘উচ্চশিক্ষিত ছেলেরা পিটিয়ে মারছে, এটা লজ্জার’, মুচিপাড়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা কোরপানের স্ত্রীর
    প্রতিদিন | ৩০ জুন ২০২৪
  • মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: দশ বছর কেটে গিয়েছে সেই ঘটনার। বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। বলা হচ্ছে, উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা কোরপান শার মৃত্যু মামলার। কোরপানের মৃত্যুর পর দশ বছর কেটে গেলেও সমাজের ‘রোগ’ এখনও নির্মূল হয়নি। শুক্রবার সকালে মুচিপাড়ার থানা এলাকার হস্টেলে ফের মোবাইল চোর অপবাদে মহম্মদ ইরশাদ নামে মেকানিককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ এখন আলোচনার কেন্দ্রে। আর এই ঘটনাই মনে করিয়ে দিল কোরপান শাহ হত্যাকাণ্ড। মুচিপাড়ার (Muchipara) ঘটনায় কোরপান শার স্ত্রী আরজিনার অভিযোগ, ”যদি আমার স্বামীর খুনে অভিযুক্তরা শাস্তি পেত, তাহলে আজ আবার ছাত্ররা এইভাবে কাউকে পিটিয়ে মারার সাহস করত না। এটা লজ্জার যে উচ্চশিক্ষিত ছেলেরা লোককে পিটিয়ে মারছে!”

    ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর। মোবাইল চুরির অভিযোগে এনআরএস হাসপাতালের (NRS Hospital) ডাক্তারি পড়ুয়ারা নিজেদের ছাত্রাবাসে কোরপান শা-কে পিটিয়ে মেরেছিল (Lynched to death)। টিভিতে মৃত স্বামী কোরপানের ছবি ও দাঁত দেখে স্বামীকে চিনতে পেরেছিলেন আরজিনা। তার পর ধীরে ধীরে তার কাছে ঘটনাটা পরিষ্কার হয়েছিল। জানা গিয়েছে উলুবেড়িয়ার (Uluberia) বানীতবলা শা পাড়ার বাসিন্দা কোরপান পেশায় ভিক্ষুক (Beggar) ছিলেন। আরজিনার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে এন্টালি থানার পুলিশ। সেই মামলা এখনও চলছে। দশজন ডাক্তারি পড়ুয়া এবং দুজন ছাত্রাবাস কর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কোরপানই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে।

    এদিকে কোরপানের মৃত্যুতে অন্ধকারে পড়ে যান তার পরিবার। আরজিনার তিন ছেলে, দুই মেয়ে। প্রথমদিকে অনেকে আরজিনার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই। পরে আর কারও সাহায্য পাননি। তৎকালীন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আরজিনা কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন। তাতে সুরাহা বিশেষ হয়নি। এখন উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সংসার চালান। তিনি উলুবেড়িয়া থেকে বেলুড়ে গিয়ে সবজি বিক্রি করেন। ভোর তিনটেয় বের হন। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। দুই ছেলে বর্জ?্য সংগ্রহ করে বিক্রি করে। দুই মেয়ে পাঁশকুড়ায় একটি আবাসিক বেসরকারি মাদ্রাসায় (Madrasa) পড়াশোনা করে। আর ছোট ছেলে প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। সেই পুরনো এক কামরায় রয়েছে। ছোট্ট ঘরটিতে আরজিনার সংসার। ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি থাকেন। আরজিনার আক্ষেপ, তিনি সরকারি কোনও সহায়তা পাননি। এমনকি কোনও ভাতা বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধাও পাননি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)