• হাতিবাগানেই চাই মল, সরতে নারাজ হকাররা
    এই সময় | ৩০ জুন ২০২৪
  • ফুটপাথ ছেড়ে যেতে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে শর্ত একটাই। শ্যামবাজার থেকে হাতিবাগান চত্বরের মধ্যে তাঁদের জন্যে তৈরি করে দিতে হবে মল। এর বাইরে কোথাও উঠে যেতে বললে তাঁরা সরবেন না। আন্দোলনে নামবেন। সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন শহরের অন্যতম শপিং ডেস্টিনেশন হাতিবাগানের ফুটপাথ-ব্যবসায়ীরা।দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে হাতিবাগানে ব্যবসা বংশী প্রসাদের। তাঁর কথায়, ‘বামফ্রন্ট আমলেও ১৯৯৬ সালে অপারেশন সানশাইনের আগে আমাদের গ্যালিফ স্ট্রিটে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। স্টলের জন্যে দু’হাজার টাকাও চাওয়া হয়েছিল।’ কিন্তু হাতিবাগান ছাড়েননি বংশীরা। কারণ, তাঁরা মনে করেছিলেন, অন্যত্র গেলে ব্যবসা চৌপাট হয়ে যাবে। ফুটপাথ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছিল হকারদের।

    কিন্তু মাস দুয়েক পরেই তাঁরা ফিরতে শুরু করেন ফুটপাথে। তার পর থেকে চলছিল আগের মতোই। কিন্তু সোমবার পুর-প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটপাথের সিংহভাগ হকারদের দখলে চলে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। সে দিন থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন হকাররা।

    কলকাতা পুরসভাকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, শহরে কত হকার রয়েছেন, এক মাসের মধ্যে তার সার্ভে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে হকারদের জন্যে মার্কেট তৈরিরও অবশ্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শনিবার দুপুরে হাতিবাগান চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা বদলেছে। রাস্তার উপরে আর জিনিসপত্র রাখা নেই। নিয়ম অনুযায়ী, ফুটপাথের এক তৃতীয়াংশে ব্যবসা করতে পারেন হকাররা।

    এত দিন সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখানো হলেও এখন ৮ ফুট চওড়া ফুটপাথের প্রায় সাড়ে তিন ফুট ছেড়েই ব্যবসা করছেন হকাররা। ওই চত্বরের দোকানি শিপ্রা সাউ, আকাশ দত্ত, বিপ্লব সাউদের বক্তব্য, ‘ফুটপাথের এক কোণে বা এই চত্বরে মার্কেট করে দিলে আমাদের আপত্তি নেই। তবে অন্যত্র যেতে বললে কেউ রাজি হবে না।’

    দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে হাতিবাগান চত্বরে ব্যবসা অনন্ত পালের। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী একটি বারের জন্যেও আমাদের তুলে দেওয়া হবে বলেননি। উনি বলেছেন, পুরো ফুটপাথ জুড়ে ব্যবসা করা যাবে না। ওঁর কথা মেনে আমরা পথচারীদের হাঁটার জায়গা ছেড়েই ব্যবসা করছি।’ পুলিশও রোজ এসে দেখে যাচ্ছে। একবারের জন্যেও তুলে দেওয়ার কথা কেউ বলেননি বলেই দাবি হকারদের।

    সবমিলিয়ে হাতিবাগান চত্বরে হকার প্রায় ১৪০০ জন। এঁদের মধ্যে টাউন ভেন্ডিং কমিটির শংসাপত্র সম্প্রতি পেয়েছেন মাত্র ২০ জন। বাকিদেরও শংসাপত্র দেওয়ার কাজ চলছিল। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে সার্ভের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সার্ভের তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে ফুটপাথের হকারদের বিষয়ে।

    টাউন ভেন্ডিং কমিটির অন্যতম সদস্য তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, ‘হকারদের তথ্য সংগ্রহের নথি হাইপাওয়ার কমিটির সামনে রাখা হবে। পুনর্বাসন কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত কমিটিই নেবে।’
  • Link to this news (এই সময়)