• হস্টেলে অত্যাচার, খুনে অভিযুক্তরা নামী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বারবার কেন এমন হচ্ছে?...
    আজকাল | ৩০ জুন ২০২৪
  • বিভাস ভট্টাচার্য: অসহিষ্ণুতা, এটাই কি ছাত্র যুবদের সাময়িকভাবে হিংস্র করে তুলছে? কোরপান শাহ থেকে ইরশাদ আলম। কলকাতা শহরে ছাত্রদের রোষের শিকার। প্রথমজন কোরপান শাহ, উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা যাকে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের এক সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল এনআরএস হাসপাতালের ছাত্রাবাস থেকে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে ছাত্রাবাসেই বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল। ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল বেশ কয়েকজন হবু ডাক্তার। ঠিক ১০ বছরের মাথায় শুক্রবার এরকমভাবেই মারের চোটে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া গেল ইরশাদ আলম নামে এক যুবককে। এবারের ঘটনাস্থল মুচিপাড়া থানার নির্মলচন্দ্র সেন স্ট্রিটের একটি সরকারি ছাত্রাবাস। ইরশাদকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাকেও বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ১৪ জন এবং তাঁরা সকলেই নামী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা প্রাক্তন ছাত্র।

    এই দুই মৃত না হয় বাইরের লোক, কিন্তু কলেজের ভেতরে, ছাত্রাবাসে সহপাঠীদের হাতে নিগৃহীত হওয়া বা চরম অত্যাচারের ঘটনাও আছে। ২০২৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'পড়ে গিয়ে' প্রথম বর্ষের এক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাতেও উঠে এসেছে কলেজের সিনিয়রদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা যখন নামী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, ধরে নেওয়া যায়, তথাকথিত পাবলিকের তুলনায় তাঁদের বিচক্ষণতা বেশি থাকবে। এটাই সমাজ আশা করে। কিন্তু তারপরও এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণ কী?

    রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ডা. প্রদীপ মিত্র বলেন, 'চিকিৎসাই হোক বা অন্য যে কোনও বিভাগই হোক, ছাত্ররা এই মুহূর্তে সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পারছে না। তারা পড়াশোনা করছে, কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের মনে এই আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে, এই পড়াশোনা তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে না। এর ফলে তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে একটা অস্থিরতা। যার প্রভাবেই তারা হঠাৎ হঠাৎ এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।'

    সমাধানের রাস্তা কী? ডা. প্রদীপ মিত্র জানিয়েছেন, 'নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং এটা দরকার একেবারে স্কুল পর্যায় থেকেই। এর জন্য রাজ্য সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে।'

    মনস্তত্ত্ববিদ ড. পৃথা মুখোপাধ্যায় বলেন, 'জীবনের গাড়িতে যে শুধু অ্যাক্সিলেটর-এ পা দিয়ে চলা নয়, সেখানে যে ক্লাচ বা ব্রেকের ব্যবহারও আছে, সেই শিক্ষাটা মনে হচ্ছে কোথাও এখন একটু কম হচ্ছে। আমি এটা করতে পারি না বা এটা আমার করাটা ঠিক নয়, এই ব্যাপারটা ঠিকঠাকভাবে মনের ভেতরে গাঁথছে না। আরও একটি বড় বিষয় হল, 'সমব্যথী' হওয়ার শিক্ষাটাও কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকে দেওয়াটা জরুরি। সেটার কোথাও একটা অভাব থাকলেও এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।'
  • Link to this news (আজকাল)