• মঞ্চে সাম্প্রদায়িক চর্চা! স্কুলের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বিতর্ক
    প্রতিদিন | ০১ জুলাই ২০২৪
  • নন্দন দত্ত, সিউড়ি: স্কুলের নবীন বরণ অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক। স্কুল মঞ্চে প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক চর্চা। ছাত্রছাত্রীরা পরিচয় পর্বে নিজের ধর্মীয় পরিচয় দেওয়াকে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। তা চরমে ওঠে রবিবার। সিউড়ি দুই ব্লকের পুরন্দরপুর হাইস্কুলের সেই ভিডিও নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে কটাক্ষ করেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।

    তিনি দাবি করেন, “ছাত্ররা নিজেদের পরিচয় পর্বে রাম রাম বলায় ওই স্কুলের এক সহ শিক্ষক তাতে বাধা দেন। তিনি তৃণমূলের শিক্ষক সেলের জেলা সভাপতি। অভিযোগ বকলমে তিনিই স্কুল পরিচালনা করেন। স্কুল কি তৃণমূলের রাজনৈতিক আখড়া হয়ে উঠল।” যদিও সহ শিক্ষক অভিজিৎ নন্দন বলেন, “স্কুল সকলের কাছে মন্দির। সেখানে কোনও ধর্মীয় পরিচয় নেই। আগেও কিছু ছেলে ইসলামিক রীতিতে পরিচয় পর্ব সারছিল। তারপরেই বাকি হিন্দু ছাত্ররা জয় শ্রী রাম বলে। প্রধান শিক্ষক সে সময় মঞ্চে উপস্থিত না থাকায় অনান্য শিক্ষকদের কথা মত আমি উঠে ছাত্রদের শুধু ‘নমস্কার’ বলার নির্দেশ দিই। এটা নিয়ে কেউ অযথা রাজনীতি করছে।”

    ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার। ১৩২ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী স্কুল পুরন্দরপুর স্কুল। সকালের স্কুলচলাকালীন স্কুলের রীতি মেনে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের নবীনবরণ চলছিল।স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে বাণিজ্য, কলা , বিজ্ঞান তিনটি বিভাগই আছে। তবে বাণিজ্য বিভাগে কেউ ভর্ত্তি হয়নি।কলা বিভাগে ১৫৬ জন ছাত্র ছাত্রী। বিজ্ঞানে ৪০ জন।এই দুশো ছাত্র ছাত্রী স্কুলের হাজার দুয়েক ছেলের সামনে মঞ্চে উঠে নিজের নাম ও পরিচয় পর্ব জানাচ্ছিল। তাল কাটল কিছু ছাত্র ছাত্রী ইসলামিক রীতিতে ছাত্র ছাত্রীদের অভিবাদন করায়। তারপরেই বাকি ছাত্ররা জয় শ্রী রাম বলে সম্বোধন করে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছিল।যে পরিচয় পর্বের জেরে মঞ্চের নিচে থাকা ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছিল। কারন স্কুলে সব ধর্মের ছাত্র ছাত্রী আছে।স্কুলের হিসাবে সেখনে ৪০ শতাংশ সংখ্যালঘু ছাত্র ছাত্রী। পরিস্থিতি বেসামাল হতেই মঞ্চে থাকা স্কুলের ইংরাজির শিক্ষক অভিজিৎ নন্দন ছাত্রদের কাছে মাইক নিয়ে নির্দেশ দেন, “শুধু নমস্কার বলে নিজের নাম বলবে।অন্য কোনও কথা নয়।”

    তাকে ঘিরেই বিজেপির রাজনীতি শুরু। জগন্নাথবাবু জানান, “আমরা পশ্চিমবঙ্গে না পশ্চিম বাংলাদেশে আছি। স্কুলে কেন ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি। পরিচয় পর্বে অন্য ধর্মের যারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছিলেন তখন কেন ওই শিক্ষক বাধা দেন নি। কেন এই প্রশ্রয়। পরে ছাত্রছাত্রীরা রাম নাম বললে কি উদ্দেশ্যে তিনি থামিয়ে দিলেন।” যদিও এই বিতর্কে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শান্তনু আচার্য্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক আশিস বিশ্বাস বলেন, “কোমলমতি ছাত্রদের মাথায় যদি এভাবে স্কুলে সাম্প্রদায়িক চর্চা ঢুকে যায় তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলায় বিপদের শঙ্কা।আমরা ক্লাসে যায় ভারতের ভাবী নাগরিক গড়তে। সেখানে তৃণমূল-বিজেপি দু দলই যদি তাদের রাজনীতির স্বার্থে এভাবে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে স্কুলেও ধর্মীয় বিভাজন করে সেটা চরম লজ্জার।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)