তালিবানি কায়দায় যুগলকে অত্যাচার চোপড়ার কুখ্যাত জেসিবির, কে এই ‘বাহুবলী’?
প্রতিদিন | ০১ জুলাই ২০২৪
শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ভয়ংকর নির্মমতা! সীমান্তের স্কুল মাঠে সালিশি সভায় ডেকে যুগলকে তালিবানি কায়দায় মারধর! রবিবার সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলিও সরব। পুলিশের জালে ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্ত জেসিবি। কিন্তু কে চোপড়ার ‘বাহুবলী’ কুখ্যাত জেসিবি?
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্ত জেসিবি চোপড়ার বিধায়ক তৃণমূলের হামিদুল রহমানের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জেল থেকে কয়েকদিন আগেই জামিনে মুক্ত হয়ে গ্রামে ফেরে। ফের দৌরাত্ম্য শুরু হয় জেসিবি ওরফে তাজমুল হক ভোলার। স্থানীয় লক্ষ্মীপুর সীমান্তের বাসিন্দা। তার ‘হম্বিতম্বি’তে তটস্থ স্থানীয় গ্রামবাসীরা। সবসময় আতঙ্কে থাকেন তাঁরা। স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় তোলাবাজি করত জেসিবি। নতুন বাড়ি নির্মাণ থেকে হাটে ধান, ভুট্টা বিক্রির পর ব্যবসায়ীদের ‘তোলা’ দিতে হয় তাকে। এমনকি চা বাগান দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সে কারণে জেসিবি সালিশি সভায় তালিবানি কায়দায় নির্মম অত্যাচার করলেও প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেননি কেউই। সকলেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন,”চোপড়ার ঘটনার দৃশ্য আমি ফেসবুকে দেখামাত্র পুলিশকে তদন্ত করার অনুরোধ করেছি। এক তরুণ এবং তরুণীকে সালিশি সভা ডেকে লাঠি দিয়ে মারধর করেছে জেসিবি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। শুনেছি তৃণমূলের লোক। এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার নিন্দা করছি।” যদিও রবিবার ইসলামপুর পুলিশ সুপার জবি থমাস বলেন,”ভিডিও ফুটেজ আসামাত্রই চোপড়ার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে।”
চোপড়ার বাসিন্দা সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তনমন্ত্রী আনায়ারুল হক বলেন,”প্রকাশ্যে এক মহিলা এবং এক পুরুষকে মারধরের কোন আইন নেই। সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসন আছে। আইন আদালত আছে। কিন্তু তার বদলে সালিশি সভা করে সাধারণ মানুষজনের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে শাসকদল। তৃণমূলের রাজত্বে পুলিশ প্রশাসনকে স্তব্ধ করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাই বিচার করছে। গ্রামে গ্রামে সন্ত্রাস শুরু করেছে এরা। এটা সামলানো এখন কঠিন হয়ে উঠেছে।” তবে যে বিধানসভা এলাকার ঘটনা ঘিরে এত শোরগোল। সেই বিধায়ক তৃণমূলের হামিদুল রহমান অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বলেন,”একজন বিবাহিত মহিলার সঙ্গে অন্য একজন যুবকের সম্পর্ক সমাজ মেনে নিতে পারে না। তাই সালিশি সভা ডাকা হয়েছিল। তবে সালিশি সভায় কিছু ভুল কাজ হয়ে গিয়েছে। তার জন্য জেসিবিকে শাসন করা হবে। কিন্তু যা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখানো হচ্ছে।”