বেউরের সেক্টর থ্রি ওয়ার্ডের ২২ নম্বর সেলে সিং কোম্পানি
এই সময় | ০১ জুলাই ২০২৪
বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
ডি কোম্পানির মতোই তার সিং কোম্পানি। সেই কোম্পানিতে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩০০। এর সঙ্গে হাজারের মতো অস্থায়ী কর্মী। প্রত্যেকই অপরাধী। কেউ কুখ্যাত কেউ ছুটকো অপরাধে অভিযুক্ত। এই অপরাধীদের বাছাই করে সিং কোম্পানিতে রিক্রুট করিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অপারেশন চালিয়ে এসেছে সুবোধ সিং। আর তার ‘অফিস’ ছিল বিহারের বেউর জেল।জেলের ভিতরে তার ‘অফিস’-এর চেহারা কেমন?
বেউর জেলের সেক্টর থ্রি ওয়ার্ডের ২২ নম্বর সেলের তিনটে ঘর দখলে রেখে অপারেশন চালিয়েছে রাজ্য পুলিশের সিআইডির হাতে বন্দি সুবোধ। ওই তিনটি ঘর থেকেই সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে সে। কী সুবিধা নেই সেখানে? টিভি, এয়ারকুলার সব রয়েছে। এখানে বসেই বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক এলাকায় ডাকাতির ছক কষত সে। মূলত তার টার্গেটে থাকত বড় জুয়েলারি শপ। তার গ্যাংয়ের হাতে লুট হওয়া সোনার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু এত সোনা সে রাখত কোথায়?
এ নিয়েও কৌতূহল কম নেই। রানিগঞ্জের স্বর্ণবিপণিতে ডাকাতির পর পুলিশ জানতে পারে, লুট হওয়া সোনার বড় অংশই সুবোধ পাচার করত নেপালে। বেউর জেল থেকে তাকে একাধিকবার ভাগলপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা সম্ভব হয়নি। এই জেলেরই সেক্টর থ্রি ওয়ার্ড থেকে সিং কোম্পানি খোলে সুবোধ।
কারা কাজ করে তার কোম্পানিতে? দাগী অপরাধী ছাড়াও ছোটখাটো অপরাধে জেলে যাওয়া লোকেদের বেছে নেওয়া হতো। তার পর তাদের দেওয়া হতো প্রশিক্ষণ। মাস গেলে বেতন ২০-২৫ হাজার টাকা। এছাড়া বড় ডাকাতি, অপহরণ, তোলাবাজির মতো ঘটনা সফল হলে মিলত আলাদা কমিশন। পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু বেউর জেল নয়, বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক জেলে তার নিজস্ব লোক রয়েছে। কখনও তাদের দিয়েও কাজ করিয়েছে সুবোধ।
সম্প্রতি আসানসোল, রানিগঞ্জ, ব্যারাকপুর, রানাঘাটের মতো এলাকায় বড় অপারেশনে সে সাহায্য নিয়েছে স্থানীয় লিঙ্কম্যানদের। বেউর জেলে নতুন কোনও অপরাধী এলে তার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হতো। এলেম বুঝে সেই অপরাধীকেও দলে টানার চেষ্টা করত সুবোধ। তবে কোনও সঙ্গী কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে ‘চরমতম’ শাস্তি দিতেও কসুর করত না বছর ৪২-এর এই গ্যাংস্টার।
দারিদ্রের সঙ্গে বড় হওয়া সুবোধের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলাতেই অপরাধে হাতেখড়ি তার। ছোট থেকে বড় অপরাধে ক্রমশ সে পোক্ত হয়ে ওঠে। ২০১৮-র ২০ জানুয়ারি পাটনার রূপসপুর থানা এলাকার রামনগরীর অভিজাত আবাসনে ডাকাতি তার প্রথম বড় অপারেশন। তবে চম্পট দেওয়ার সময়ে তার গাড়ির পিছনে ধাওয়া করে বিহার পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।
উভয়পক্ষে গুলির লড়াইও চলে। গ্রেপ্তার হয় সুবোধ ও তার দুই সাগরেদ। তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় ১৫ কেজি সোনার গয়না ও দেড় লক্ষ টাকা। সঙ্গে ৪টে পিস্তল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে পাঠায় নালন্দার হিলসা জেলে। পরে সেখান থেকে বেউর। ধীরে ধীরে সেই বেউর হয়ে উঠল তার সিং কোম্পানির সদর দপ্তর।