• তিন আইন: ক্ষুব্ধ বার কা‌উন্সিল, পক্ষে সায়ও
    আনন্দবাজার | ০১ জুলাই ২০২৪
  • দেশে নতুন তিন ফৌজদারি আইনে কি তদন্তে গতি আসবে? প্রযুক্তির ব্য়বহারে তদন্ত প্রক্রিয়া হবে আরও যুগোপযোগী? না কি পুলিশের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দিয়ে গণতন্ত্রের ক্ষতিই হতে চলেছে? আজ, সোমবার 'ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ (বিএনএস) ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ (বিএনএসএস), ‘এবং ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’ (বিএসএ) চালু হওয়ার আবহে দেশ জুড়ে চলছে বিতর্ক। রাজ্য়ের আইনজীবী মহলও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত।

    এই ‘অগণতান্ত্রিক’ আইনের প্রতিবাদে সোমবারই রাজ্যের সমস্ত আদালতে কর্মবিরতি এবং ‘কালা দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেব বলেন, ‘‘এই তিনটি আইন তৈরির আগে আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। এই আইনের ফলে বিচারপ্রার্থীরাও সমস্যায় পড়বেন।’’ কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, বহু লোকের মতামত নিয়ে সাধারণ মানুষকে ন্যায় এবং সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই আইন আনা হয়েছে।

    আইনজীবী শেখ সেলিম রহমান বলেন, ‘‘ন্যায় সংহিতার মধ্যে সন্ত্রাসবাদের ধারা ঢোকানো হয়েছে। আগে কারও বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের মামলা করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিয়ে ইউএপিএ প্রয়োগ করা হত। নতুন আইনে পুলিশ যখন তখন যে কারওর বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করতে পারে। এ তো আরও ভয়ানক!’’ একই কথা বলছেন আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়।

    দেখা যাচ্ছে, পুরনো আইনে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে পেত পুলিশ। নতুন আইনে ৪০ দিনের সময়সীমায় অভিযুক্তকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে কোনও ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে চাইতে পারে পুলিশ। এর ফলেও তদন্তের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে বলে মনে করেন, আইনজীবী প্রবীর মুখোপাধ্যায়। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলছেন, ‘‘দণ্ডসংহিতা আইনে এজলাসের মধ্যেও অভিযুক্তকে হাতকড়া পরাতে পারবে পুলিশ। এ তো মানবাধিকার লঙ্ঘন।’’

    তবে আইনজীবী কল্লোল মণ্ডলের মতে, ‘‘এই আইন তৈরি সঠিক সিদ্ধান্ত। নতুন ধরনের অপরাধগুলির বিচার নতুন আইনেই সম্ভব।’’ আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘নতুন আইনে পুলিশকে তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার কথা বলা হয়েছে। পুলিশি তল্লাশি চলার সময় ভিডিয়োগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর দরকার ছিল।’’ ব্যাঙ্কশাল আদালতের সরকারি আইনজীবী ত্রিবেণী রেড্ডিরও মত, ‘‘বিএসএ আইনে সাক্ষ্যগ্রহণ পদ্ধতিতেও বেশ কিছু বদল আনা হয়েছে।ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণে তদন্ত জোরালো হবে।’’ পুলিশের হাতে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার প্রসঙ্গে কল্লোল বলেন, ‘‘কোনও কোনও অপরাধের তদন্তের জন্য পুলিশকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করলে দোষ পুলিশের। আইনের নয়।’’ তবে নতুন আইন দ্রুত কার্যকর করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্দেশিকা তৈরি করুক বলে মনে করেন অনেক আইনজীবীই।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)