হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের লোকাল ট্রেনে কান পাতলে প্রায়শই একটি পরিচিত কণ্ঠস্বরকে বলতে শোন যায় 'কাটি দেব?' হটাৎ করে শুনলে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কে আবার কাকে কাঠি দেবে? কেনই বা দেবে? যদিও এ কাঠি অবশ্য সেই কাঠি নয়, এ হল কাঠি ভাজা। বক্তা, দীর্ঘদিনের হকার মঙ্গল হাজরা। সাধারণভাবে দেখলে আর পাঁচজন হকারের মতো লাগলেও, বিক্রির বিশেষ স্টাইলই হল তাঁর ইউএসপি। আর মঙ্গল হাজরার বিক্রির সেই বিশেষ ধরন খুবই পছন্দ যাত্রীদের। বলতে গেলে যাত্রীদের মধ্যেও ভীষণ 'ফেমাস' তিনি। যাতায়াতের পথে কাঠি ভাজা খাওয়ার ইচ্ছা হলে প্রায় সবকলেই খোঁজেন 'কাঠি কাকু'কে।হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনে লোকাল ট্রেনে প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রত্যেকেই ট্রেনে চড়ে যে যাঁর নিজের গন্তব্যে পৌঁছন। আর এই লোকাল ট্রেনে নিত্যযাত্রী ছাড়াও দেখা মেলে বহু হকারের। ট্রেনই তাঁদের রুজিরুটির ভরসা। কেউ বিক্রি করেন ফল, তো কেউ আবার নিয়ে ওঠেন বাদাম ভাজা, ছোলা ভাজা, ঝুরি ভাজা। প্রত্যেকেই হাঁক পেড়ে যাত্রীদের জানান দেন নিজের উপস্থিতি। যাত্রীদের হাতে তুলে দেন বিভিন্ন খাবার। এভাবেই চলে তাঁদের সংসার।
সেই সব হকারদেরই একজন মঙ্গল হাজরা। বর্ধমানের রসুলপুরের বাসিন্দা মঙ্গল হাজরার বয়স প্রায় ৬৫ বছর। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে ট্রেনে হকারি করে আসছেন। সন্ধে হতেই হাওড়া-বর্ধমান মেনলাইনে ৬টা ১২-র বর্ধমান লোকালে খন্যান স্টেশন থেকে প্রথম কম্পার্টমেন্টে ওঠেন তিনি। সঙ্গে থাকে কাঠি ভাজা, বাদাম বাজা, মিষ্টি বাদাম সহ আরও বেশকিছু মুখোরোচক খাবার। তবে সবকিছুর মধ্যে কাঠিভাজাই তাঁর 'স্পেশ্যাল'। আসলে স্বাদে অন্যদের থেকে খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও বিক্রির ধরনটা একেবারেই অন্যরকম। শুরুটা হয় খানিকটা এই রকম, 'কাঠি দেব নাকি? কাঠি লাগবে?' আবার কোনও সময় বলে ওঠেন, 'কেউ বাকি আছে? কাঠি দেব?' মঙ্গলের এই বেচাকেনা বেশ উপভোগ করেন কামরায় উপস্থিত যাত্রীরাও। অনেকেই তাঁর প্রতিদিনের ক্রেতা। এই প্রসঙ্গে মঙ্গল বলেন, '৩৯ বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছি, এই দিয়েই আমার সংসার চলে। ভাজা কিনে বাড়িতে প্যাকিং করে তা বিক্রি করি।'
জয় মুর্মু নামে এক ট্রেন যাত্রী বলেন, 'প্রতিদিনই ট্রেনে যাতায়াত করি। প্রতিদিনই মঙ্গলদার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি খন্যান স্টেশন থেকে ওঠেন। ট্রেনের অনেক যাত্রী তাঁর কাছ থেকে কাঠি ভাজা খান। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি যে ভাবে বিক্রি করেন সেটা আমাদের আরও বেশি ভালো লাগে।' বলতে গেলে এভাবেই 'হাতে কাঠি' ঘুরে বেরাচ্ছেন মঙ্গল।