শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: এই প্রথমবার নয়। এর আগেও একাধিক কুকীর্তি রয়েছে জেসিবির। স্থানীয়দের দাবি, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের ‘ডান হাত’ ছিলেন তিনি। আর সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে খুন থেকে সালিশি সভায় নির্যাতন, তোলাবাজির মতো একের পর এক গুরুতর অপরাধ করেছে। কীভাবে এত অপরাধের পরেও এলাকায় দৌরাত্ম্য বজায় ছিল জেসিবির, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
রবিবারই প্রকাশ্যে এসেছে জেসিবির সালিশির ভিডিও। যাতে দেখা গিয়েছে, কঞ্চি হাতে বেধড়ক মারধর করছেন এক তরুণীকে। তাঁর পুরুষসঙ্গীর তালিবানি নির্যাতনের শিকার। দুজনের ‘অপরাধ’ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন। সেই ঘটনায় রাজ্যে জোর শোরগোল। শাসক-বিরোধীর মধ্যে চলছে জোর আলোচনা। আপাতত পুলিশের জালে জেসিবি। আদালত তাকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
গ্রেপ্তারির পর থেকে জেসিবির একের পর এক কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসছে। সোমবার ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দড়ি দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় যুগল বসে রয়েছেন। খালি গায়ে বসে রয়েছেন এক যুবক। তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। নির্মম অত্যাচারে কার্যত মৃতপ্রায় দশা তরুণীর। অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। ওই ভিডিওতে যাকে দেখে গিয়েছে, সে-ও জেসিবি। রবির মতো সোমবারের ভিডিওতেও লাঠি হাতে তাঁকে অত্যাচার করতে দেখা গিয়েছে।
শুধু সালিশি সভার আয়োজন করে মারধর নয়, খুনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে জেসিবির বিরুদ্ধে। গত পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে চোপড়ায় বামেদের মিছিলে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাতে এক সিপিএম নেতার মৃত্যুও হয়। সেই ঘটনায় নাম জড়ায় জেসিবির। গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। জেল থেকে মাত্র কয়েকদিন আগেই জামিনে মুক্ত হয়ে গ্রামে ফেরে। ফের দৌরাত্ম্য শুরু হয় জেসিবি ওরফে তাজিমুল ইসলামের। স্থানীয় লক্ষ্মীপুর সীমান্তের বাসিন্দা।
অস্ত্র আইনেও মামলা রয়েছে জেসিবির বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় তোলাবাজি করত জেসিবি। নতুন বাড়ি নির্মাণ থেকে হাটে ধান, ভুট্টা বিক্রির পর ব্যবসায়ীদের ‘তোলা’ দিতে হয় তাকে। এমনকি চা বাগান দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সে কারণে জেসিবি সালিশি সভায় তালিবানি কায়দায় নির্মম অত্যাচার করলেও প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেননি কেউই। সকলেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এমন গুরুতর অভিযোগে নাম জড়িয়েছে যার, তার বিরুদ্ধে কেন কোনও কঠোর ব্যবস্থা নিল না পুলিশ, বিভিন্ন মহলে উঠছে সেই প্রশ্ন। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা। যদিও শাসক দলের নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ারও পরামর্শ তাঁর। এদিকে, এই ঘটনায় চোপড়া থানার আইসিকে শোকজ করেছে রাজ্য পুলিশ।