এই সময়: যদি প্রশ্ন করা হয়, ভাসান দেওয়ার পরে কী থাকে দেবীর? দূষণ জর্জরিত এই সময়ে এ প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক নয় মোটেই। উত্তরটাও সকলের জানা। প্রতিমার মাটি ধুয়ে যায়, খড় পচে জলে মিশে যায় প্রতিমার রং। তাতে ঠাসা থাকে সিসা। বিজ্ঞানীদের মতে যা বারোটা বাজায় পরিবেশের। পরিবেশ কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ‘লেড-ফ্রি পেইন্ট’-এর জন্য জোর সওয়াল করলেও সিসা-মুক্ত রঙের ব্যবহার সে ভাবে শুরুই হয়নি।এবার সেই উদ্যোগ নিল একটি সংস্থা। সোমবার থেকে কুমোরটুলিতে শুরু হলো সেই কাজ। শাস্ত্রে বলছে, দেবী হবেন তপ্ত কাঞ্চন বর্ণা। অর্থাৎ পাকা সোনার মতো হবে তাঁর গাত্র বর্ণ। ল্যাব টেস্টের ফল বলছে, পাকা হলুদ রঙেই থাকে সব থেকে বেশি সিসা। মেঘদূতম ফাউন্ডেশন নামের সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে কুমোরটুলির শিল্পীদের পাশে রয়েছে। ভিন্ দেশী পর্যটকদের পুজোয় কলকাতা ভ্রমণের ব্যবস্থাও করেন তারা।
এই সংস্থার কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘বিদেশি পর্যটকরা পুজো, প্রতিমা, বিসর্জন দেখে মুগ্ধ হন। কিন্তু যখন তাঁরা জানতে পারেন যে, এই রঙে মিশে আছে ক্ষতিকর সিসা। তখন কিন্তু তাঁদের অনেকে বেশ অখুশিই হন। সে জন্যই আমরা পুরো কুমোরটুলিতেই এই ব্যবস্থা চালু করব। সব প্রতিমা শিল্পীদের বুঝিয়েছি। অনেকেই রাজি হয়েছেন।’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সিসা হলো বিষ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সিসা জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের বৃদ্ধি এমনকী প্রজননেও প্রভাব ফেলে। দেখা গিয়েছে, মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে স্নায়ু বিকলের মতো ঘটনাও ঘটে। বহুদিন ধরে পরিবেশ কর্মীরা সিসা-মুক্ত রং ব্যবহারের জন্য সওয়াল করে আসছেন। কিন্তু মৃৎ শিল্পীদের অধিকাংশই তা করেন না।
পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘শিল্পীরা ব্যবহার করতে চাইবেন না সেটাই হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু কড়া নির্দেশ জারি করলে আর কোনও বিকল্প থাকবে না।’
সিসা যুক্ত রং ঠিক কেমন?
জয়দীপ জানান, ল্যাবরেটরিতে দেখা গিয়েছে উজ্জ্বল হলুদ রঙের প্রতি ইউনিটে সিসার পরিমাণ ৯১ হাজার ২০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। বাকি রংগুলির কোনওটিতে এই পরিমাণ ৫০০ থেকে ৫০০০। কিন্তু শিল্পীরা এই রং ব্যবহার করতে চাইছেন না। কারণ, লেড ফ্রি পেইন্ট-এর দাম বেশি। এ ছাড়াও এই রং বেশি টেকসই, ঔজ্জ্বল্য বেশি, তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
জয়দীপ বলছেন, ‘শিল্পীদের কাছ থেকে জেনেছি এক লক্ষ টাকার প্রতিমায় ৫ হাজার টাকার রং লাগে। লেড-ফ্রি হলে তার দাম ৭০০-৮০০ টাকা বেশি হয়। আমাদের আশা, আমরা শিল্পীদের এই বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হব।’