অর্ণব আইচ: বউবাজারের হস্টেলে গণধোলাইয়ে খুনের ঘটনায় নামী ফুড চেনের দোকানে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ মুছে দিয়েছিল অভিযুক্তরা। তাতেও শেষ রক্ষা হল না। একটি মুদির দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ থেকে ‘অপহরণ’-এর ফুটেজ জোগাড় করল পুলিশ। কীভাবে চাঁদনি চকের টিভি মেকানিক নিহত এরশাদ আলমকে রাস্তা থেকে টেনেহিঁচড়ে ‘অপহরণ’ করে হস্টেলের ভিতর নিয়ে যাওয়া হয়, সেই দৃশ্য স্পষ্ট সামনে এসেছে পুলিশের।
এছাড়াও গণধোলাইয়ের(Lynching) সময় কয়েকজন ছাত্র বাধা না দিয়ে নিজেদের মোবাইলে ভিডিও করছিল, এমনই অভিযোগ। ওই ছাত্রদের মোবাইল ঘেঁটে সেই ফুটেজগুলি পাওয়ার চেষ্টা করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশের অভিযোগ, গণধোলাইয়ের সময় পাঁচজন সরাসরি মারধর করে। তাদের মধ্যে রয়েছে শংকর বর্মন। এ ছাড়াও ধৃতদের জেরায় উঠে এসেছে পবিত্র মুর্মুর নাম। লালবাজারের (Lalbazar) এক আধিকারিক জানান, ধৃতদের জেরায় উঠে এসেছে আরও দুই ছাত্রের নাম, যারা মারধর করেছিল। তারা এখন পলাতক বলে দাবি লালবাজারের। যদিও অভিযুক্তদের মোবাইলের ওই ভিডিও ফুটেজগুলি পরীক্ষা করার পরই পুলিশ এই ব্যাপারে নিশ্চিত হবে। ওই হস্টেলের সুপারকে তলব করেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এরশাদ আলমকে একাধিক ব্যাট, উইকেট ও লাঠি দিয়ে গণধোলাই দেওয়া হয়। এর মধ্যে মারধর করার সময় একটি ব্যাট ভেঙে আধখানা হয়ে যায়। আধখানা ব্যাট আগেই পুলিশ উদ্ধার করেছিল। সোমবার বাকি আধখানা ব্যাট পুলিশ ওই হস্টেলের দোতলা থেকেই উদ্ধার করে। এদিন ফরেসনিক বিশেষজ্ঞরা (Foressic Team)ঘটনাস্থলে যান। হস্টেলের দোতলায় সুপারের ঘরের সামনের বারান্দা থেকে রক্তের দাগ, কিছু মাথার চুলও উদ্ধার করে ফরেনসিক। সেই রক্ত ও চুল ইরশাদ আলমের কি না, তা পরীক্ষা করবেন বিশেষজ্ঞরা।
গত শুক্রবার বউবাজারের রাস্তা থেকে এরশাদকে হস্টেলে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধোলাই দেয় ছাত্ররা। ইতিমধে্যই ১৪ জন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তদন্ত শুরু হওয়ার পর পুলিশ জানতে পারে যে, হস্টেলের পাশেই একটি ফুড চেনের দোকান থেকে সিসিটিভির ফুটেজ (CCTV Footage) মুছে দেয় কয়েকজন ছাত্র। তাই রাস্তা থেকে এরশাদকে অপহরণের (Kidnap) ফুটেজ পুলিশ প্রথমে পায়নি। এর পরই মুচিপাড়া থানার আধিকারিকরা আশপাশের সিসিটিভির ক্যামেরার সন্ধান করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত হস্টেলের পাশেই একটি মুদির দোকানের সিসিটিভির ক্যামেরার উপর নজর দেন পুলিশ আধিকারিকরা।
ওই মুদির দোকানের সিসিটিভি ফুটেজেই দেখা যায় এরশাদ আলমকে অপহরণ করার দৃশ্য। পুলিশের মতে, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবারও বউবাজারের ওই হস্টেলের সামনে এরশাদকে দেখা গিয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজেও উঠেছে সেই দৃশ্য। কেন তিনি দু’দিন পর পর ওই একই জায়গায় ঘোরাঘুরি করছিলেন, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।