• নতুন আইনের প্রতিবাদে ‘কালা দিবস’ আদালতে
    আনন্দবাজার | ০২ জুলাই ২০২৪
  • দেশ জুড়ে চালু হল ভারতীয় ন্যায় সংহিতা সহ নতুন তিন ফৌজদারি আইন। তাতে আপত্তি জানিয়ে সোমবার দুই ২৪ পরগনার জেলা আদালতগুলিতে ‘কালা দিবস’ পালন করে কোনও মামলার সওয়াল করতে চাইলেন না আইনজীবীদের একাংশ। বিচারপ্রার্থীরা সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেই আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে বিভ্রান্ত হলেন। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার মতো ফৌজদারি আইনগুলি পরিমার্জনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূমিকা বিভ্রান্তিকর বলে অভিযোগ জানিয়েছেন জেলা ও দায়রা আদালতের বহু আইনজীবী।

    আইনজীবীরাও বিচারপ্রার্থীদের প্রতি সমব্যথী হয়ে জানালেন, বিভ্রান্তি নতুন আইন নিয়ে। এতে লঘু পাপে গুরুদণ্ডের সুযোগ আরও বেশি করে করে দেওয়া হল। ক্ষমতাবানেরা এই সুযোগের অপব্যবহার করবেন বলে কোথাও কোথাও আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিলও করলেন। পোড়ানো হল আইনের প্রতীকী বই।

    ব্যারাকপুর আদালতে ১৫ জন বিচারক আটটি কোর্ট রুমে বসেন। এ দিন তাঁরা উপস্থিত হলেও কোনও মামলা ওঠেনি, আইনজীবীরা উপস্থিত না হওয়ায়। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বীরেন ভকত বলেন, ‘‘এটুকু বোঝা গিয়েছে, পয়লা জুলাই থেকে ভারতীয় আইন ব্যবস্থা থেকে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া নিয়মগুলি তুলে দেওয়া হল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পরিমার্জিত হল স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করা ভারতের নতুন আইন। রাজ্য বিশেষে তা আরও পরিমার্জনের সুযোগ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সেগুলি আইনজীবীদের কাছে পরিষ্কার না হলে বিচারপ্রার্থীদের স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ায় জটিলতা দেখা দেবে। তা নিয়েই মূলত আপত্তি।’’

    নতুন আইন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বনগাঁ মহকুমা আদালতের আইনজীবীরাও। সোমবার কর্মবিরতি পালন করলেন তাঁরা। বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, ‘‘আরও বিচার-বিবেচনা করে আইন প্রণয়ন করা হোক। এই দাবিতে আমরা কর্মবিরতি পালন করেছি।’’ কেন এই আইনের বিরোধিতা? সমীর জানান, বধূ নির্যাতন, পকসো আইনের ক্ষেত্রে সাজা আরও কঠোর করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বধূ নির্যাতন বা পকসো আইনে মিথ্যা মামলায় মানুষকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। আইনের অপব্যবহার হয়। পকসো আইনে ন্যায় সংহিতায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বধূ নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাজা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে নিরপরাধ মানুষও কঠোর সাজা পেয়ে যেতে পারেন বলে আইনজীবীদের একাংশের আশঙ্কা।

    এ দিন আইনজীবীদের কর্মবিরতির ফলে কোনও মামলার শুনানি হয়নি। থানা থেকে পাঠানো অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য ভারপ্রাপ্ত সরকারি আইনজীবী অসীম দে। তিনি বলেন, ‘‘নতুন আইন তৈরির প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। এই আইনের ফলে বহু মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে।’’ নতুন আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে বসিরহাট আদালতেও ‘কালা দিবস’, কর্মবিরতি এবং প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়।

    উত্তরের মতোই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও নতুন আইনের প্রতিবাদে এ দিন কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ চলল বিভিন্ন আদালতে। বারুইপুর মহাকুমা আদালতে এ দিন আইনজীবী ও মামলাকারীদের একাংশ এই আইনের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান। নতুন আইনের তিনটি প্রতীকী বই পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। নতুন আইনে অনেক বেশি ক্ষমতা পেয়ে পুলিশ তার অপব্যবহার করবে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। বারুইপুর মহকুমা ফৌজদারি আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জ্যোতিপ্রকাশ মণ্ডল বলেন, “নতুন আইন জনস্বার্থ বিরোধী। এই আইনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”

    ‘কালা দিবস’ পালন করলেন কাকদ্বীপ আদালত বার কাউন্সিলের সদস্যেরাও। তাঁদের দাবি, এই তিন আইন জনবিরোধী, অনৈতিক, কঠোর এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী। কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতে এ দিন বিচারকেরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কোনও মামলায় এক জন আইনজীবীও যোগদান করেননি। কাকদ্বীপ কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মনোজ পন্ডা বলেন, “আমরা যাঁরা আইনের পেশার সঙ্গে যুক্ত, নতুন আইন নিয়ে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। সকলে এই বিষয়ে অবগত নয়। মৌখিক ভাবে আমরা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু কোনও মিটিং-মিছিল করা হয়নি। মানুষের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, পরে আর হবে না।”

    নতুন আইনের বিরোধিতা করে কালা দিবস পালন করেন ডায়মন্ড হারবার আদালতের আইনজীবীরাও। আদালত চত্বরে মিছিল করা হয়। কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। ডায়মন্ড হারবার আদালতের আইনজীবী মেহেবুর রহমান গায়েন বলেন, “রাজ্য বার কাউন্সিল কালা দিবস পালন করেছে। আমরাও এখানে সম্পূর্ণ কাজকর্ম বন্ধ রেখে কালা দিবস পালন করেছি। এই আইনে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)