গত ৩১ মে রাতে এই মৃত্যুর ঘটনায় সম্প্রতি রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে মৃতার পরিবার। নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘এমন মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখের। ব্যাঙের ছাতার মতো এই ধরনের নেশামুক্তি কেন্দ্র গজিয়ে উঠেছে। গাফিলতি যারই থাকুক, সব দিক থেকে পদক্ষেপ করা হবে।’’ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও বললেন, ‘‘বিষয়টি জেনেছি। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতার নাম পৌলোমী ধর (২৮)। তিনি ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া ছিলেন। একাধিক নামী হোটেলে চাকরি করার পরে একটি বহুজাতিক সংস্থায় যুক্ত হন। পৌলোমীর বাবা দীপককুমার ধরের দাবি, ‘‘কয়েক জন সহকর্মীর সূত্রে নেশার কবলে পড়েছিল মেয়ে। ২০১৯ সালে ওকে ঠাকুরপুকুরের ‘চারুলতা উইমেন রিহ্যাব সেন্টারে’ এক বার ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে ফিরে ফের নেশা শুরু করায় গত ১৮ ডিসেম্বর মেয়েকে ফের হোমে ভর্তি করি।’’ দীপক জানান, প্রথম দেড় মাস তাঁদের মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ১১ মে শেষ বার তাঁদের সঙ্গে পৌলোমীর দেখা হয়। কিন্তু ২৫ মে দীপক মেয়ের খোঁজ নিতে ফোন করলেও নেশামুক্তি কেন্দ্রের সেক্রেটারি মৌমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন ধরেননি। দীপকের অভিযোগ, ‘‘৩০ মে ফোন ধরে মৌমিতা জানান, ‘বাইরে রয়েছি, ফিরে কথা হবে’। এর পরে ফোন কেটে দেন। ৩১ মে মধ্যরাতে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। অত রাতে অচেনা নম্বর দেখে ধরিনি। পরদিন সকালে অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারি, মহেশতলা থানার জিঞ্জিরাবাজার আউটপোস্ট থেকে ফোন করা হয়েছে। পৌলোমী মারা গিয়েছে!’’ তাঁর পরিবার এর পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহ দেখে। সেখানে এক পুলিশকর্তা ভিডিয়োগ্রাফির পরে তরুণীর দেহ ময়না তদন্তের জন্য মহম্মদ আলি পার্ক সংলগ্ন পুলিশ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
দীপকের প্রশ্ন, ‘‘মেয়ে ওড়না পেল কোথা থেকে? কেন নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ফোন করে খবর দেওয়া হল না? কেন পরিবারের উপস্থিতি ছাড়াই পুলিশ রাতে মৃতদেহ বার করে নিয়ে গেল?’’ পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার এত দিন পরেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট তাঁদের জানানো হয়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্যও পুলিশ তাঁদের জানায়নি। যদিও হরিদেবপুর থানার তরফে দাবি করা হয়েছে, মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট আসার পরেই ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট স্পষ্ট হবে। লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘পুলিশকে পূর্ণ তদন্ত করার সময় দিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’
ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের সেক্রেটারি মৌমিতার দাবি, ‘‘ওই তরুণী বাড়িতে আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ওঁর ঘরে আরও যে দু’জন থাকতেন, তাঁরা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কারও সঙ্গে গন্ডগোল হয়ে থাকলে পুলিশ খুঁজে বার করবে। তদন্তে সব রকম সাহায্য করছি।’’ কিন্তু নেশামুক্তি কেন্দ্রে নাগালের মধ্যে ওড়না থাকে কী করে? একই ঘরে মানসিক রোগী আর নেশাগ্রস্তকে একসঙ্গে রাখা হল কী করে? কেন তরুণীর পরিবারকে সে রাতেই থেকে ফোন করা হয়নি? —কোনওটিরই স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।