কী রকম এগিয়ে যাওয়া এজাজের? একদিকে, পুরুষদের মধ্যে জেলার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে পূর্ব রেলের ক্রিকেটদলে সুযোগ পাওয়া। অন্য দিকে, 'অনূর্ধ্ব ১৯' বাংলা দলের সম্ভাব্য তালিকাতেও নাম। দিনমজুর পরিবারের ছেলে এজাজের এই জোড়া সাফল্যে খুশির হাওয়া নজরুলপল্লীতে। কলকাতা থেকে ট্রায়ালের মাঝে একদিনের ছুটিতে শনিবারে বাড়িতে আসতেই বাড়ির ছোট ছেলেকে নিয়ে উচ্ছ্বাস পরিবার প্রতিবেশীদের মধ্যে।
পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে এজাজের বাবা আজিমউদ্দিন একটি সবজির আড়তে কাজ করেন। বড় দাদা ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক। মেজ দাদা মুদির দোকানের কর্মচারী। এজাজ এখন চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। মাত্র সাত বছর বয়সেই এজাজকে চাঁচল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। শুরু থেকেই প্রতিভাবান এজাজ প্রশিক্ষক রাজেশ দাসের নজরে পড়েছিলেন। ক্রিকেটের মতো খরচসাপেক্ষ একটি খেলার প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া তাঁর পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট কষ্টকর ছিল। তবে তা সত্ত্বেও তাঁর পরিবারের সমর্থন কমেনি এবং যথারীতি চলে প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণও। যার ফলে তাঁর আজকের এই সাফল্য। এমনই মনে করেন স্বয়ং এজাজ।
জানা গিয়েছে, চলতি বছর সিএবি পরিচালিত প্রথম ডিভিশনের ক্রিকেট লিগে পূর্ব রেলের হয়ে খেলবেন তরুণ এই ক্রিকেটার। এই সাফল্যে খুশি হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চাইছেন না এজাজউদ্দিন। তাঁর লক্ষ্য, ভারতের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলা। ইতিমধ্যে জেলা এবং রাজ্য স্তরের বহু টুর্নামেন্টে সাফল্য পেয়েছেন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার এজাজ। এবার রেল এবং বাংলা দলের হয়ে কতটা সফল হতে পারবেন তিনি, সেই দিকেই তাকিয়ে তাঁর পরিবার।
যে পরিবার তাঁকে এমন সমর্থন জোগাল, তা নিয়ে কী মন্তব্য এজাজের?
এজাজউদ্দিন বলেন, 'একদিকে বাবা-মায়ের সমর্থন, অন্য দিকে, স্যার রাজেশ দাসের প্রশিক্ষণ। সব মিলিয়ে আজকের এই সাফল্য। তবে স্বপ্ন পূরণের পথ এখনও অনেকটা বাকি।
আর কী বলছেন তাঁর পরিবার, প্রশিক্ষক?
এজাজউদ্দিনের বাবা আজিমউদ্দিন অশ্রুশিক্ত চোখে বলেন, 'খুব অভাবের সংসার আমাদের। তার মাঝে ছোট ছেলের এই সাফল্য অভাবের অন্ধকারে আলো নিয়ে এল।' মা হুশনেরা বিবি জানান, 'ছেলে আমার ইন্ডিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ পাক--এটাই এখন চাওয়া।' প্রশিক্ষক রাজেশ দাস বলেন, 'ওর মধ্যে অনেক প্রতিভা রয়েছে। প্রচণ্ড পরিশ্রমী। দারিদ্র্য জয় করে আজ এই জায়গায় এসেছে ও। আশা করি, আগামী দিনে আরো বড় হবে।'