এই সময়: রাজ্যে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনায় পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধারাবাহিক ভাবে এমন ঘটনা ঘটে চললেও গোয়েন্দারা কেন আগে থেকে সেই খবর জানতে পারছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পরপর এই গণপিটুনির ঘটনাগুলিতে যে ক'জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে।গত ১১ জুন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গণপিটুনির অন্তত ১৫টি ঘটনা ঘটেছে। চন্দননগর, বারাসত, অশোকনগর, ঝাড়গ্রাম থেকে শুরু করে রাজারহাট, বউবাজার-প্রায় সবক'টি ঘটনাতেই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। তবে আগেভাগে কেন পুলিশ এই ধরনের ঘটনাগুলি আটকাতে পারছে না, কেন খবর পেয়েও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশ সে ভাবে সক্রিয় হচ্ছে না-তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পুলিশকর্তাদের।
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার নবান্নে উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা)। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই গণপিটুনি আটকাতে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশকে তিরস্কার করেন মুখ্যমন্ত্রী। সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, '
এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। পুলিশকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। পুলিশের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। এলাকায় এলাকায় পুলিশের সোর্স তৈরি করতে হবে। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।' এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'আমার কাছে খবর আছে, অভিযোগ পেয়েও পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে কোনও অ্যাকশন নিচ্ছে না। তারা চুপ করে বসে থাকছে। পুলিশকে এত দুর্বল হলে চলবে না। আরও কঠোর হতে হবে।'
রাজ্যে গণপিটুনি এবং হিংসার ঘটনা রুখতে পুলিশকে এদিন বেশ কয়েকটি নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন, সাম্প্রতিক অতীতে যে সব এলাকায় এই ধরনের হিংসার ঘটনার ইতিহাস রয়েছে, সেখানে পুলিশকে বেশি করে নজর দিতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশকে মিশতে হবে। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে টিভি-রেডিয়ো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি করে প্রচার চালাতে হবে। কেউ ভুয়ো খবর ছড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন মমতা।
এরপরে নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার কথা সরকারের গোচরে এসেছে। ঘটনাগুলি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমাদের সকলেরই এ বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য কোনও ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট নয়। তারপরেও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা এবং পরিবারের কোনও একজন সদস্যকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে।'
ওই সাংবাদিক বৈঠকেই এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা বলেন, 'এসপি, পুলিশ কমিশনার-সহ সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কেউ আইন ভাঙলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে পুলিশকে নজরদারি ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও বলা হয়েছে।'