• ব্যাঙ্ক লোন মেটানোই চ্যালেঞ্জ উচ্ছেদ হওয়া হকারদের কাছে
    এই সময় | ০৩ জুলাই ২০২৪
  • এই সময়, বর্ধমান: ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করাই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে বর্ধমান শহরে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের কাছে। বহু হকারই ব্যবসা চালাতে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে মাইক্রো ফাইন্যান্স স্কিমে লোন নিয়েছিলেন। ব্যবসাহীন অবস্থায় ঋণ শোধের ভাবনায় রাতের ঘুম উড়েছে ওই হকারদের।গত সোমবার বর্ধমান শহরের জেলখানা মোড় থেকে চার্চ রোড পর্যন্ত রাস্তার দু'ধারে থাকা অবৈধ হকারদের সরিয়ে দিয়েছে মহকুমা প্রশাসন ও পুরসভা। ভেঙে ফেলা হয় একশোটিরও বেশি অবৈধ দোকান। উচ্ছেদ হওয়া ২৩ জন হকার জানিয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। সব মিলিয়ে ঋণের অঙ্ক প্রায় ২৯ লাখ টাকা।

    এই টাকাতেই দোকান সাজিয়েছিলেন তাঁরা। প্রতি সপ্তাহে এঁরা দু'হাজার, চার হাজার টাকা ঋণ মেটাতেন। ব্যাঙ্কের রিকভারি এজেন্টরা দোকান এসে ঋণের সাপ্তাহিক টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন। এভাবেই চলছিল ব্যবসা। উচ্ছেদ হওয়া এলাকায় ডেকরেটরের ব্যবসা করতেন সন্দীপ গুপ্ত নামে এক হকার। ব্যবসার জন্য তিনি লোন নিয়েছিলেন ৪ লাখ টাকা। সপ্তাহে ৬ হাজার টাকা করে ঋণ মেটাতেন।

    মঙ্গলবার কিস্তির টাকা মেটানোর দিন ছিল তাঁর। সকালেই তাঁর কাছে এসেছিলেন ব্যাঙ্কের রিকভারি এজেন্ট। তাঁর কাছে ৬ মাসের সময় চেয়েছেন সন্দীপ। বলেন, 'আমি ৬ মাস সময় চেয়েছি। ওরা বলেছে ফোনে সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। কিন্তু টাকা কীভাবে শোধ করব জানি না।' ১৪ বছর ব্যবসা করছেন জানিয়ে বলেন, 'বেশি সুদ জেনেও অতীতে টাকা ঋণ নিয়ে শোধ করেছি। এখন তো পথে এসে দাঁড়ালাম। জানি, এর পরে ওরা আমাদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ঝামেলা পাকাবে।'

    হকার ঝুম্পা সাহার বক্তব্য, 'আমার ৬০ হাজার টাকার লোন ছিল। আগের লোন ছিল দেড় লাখ টাকা। ব্যবসা করেই সেটা শোধ করেছিলাম। তার পরে এই লোন নিয়েছি। সপ্তাহে ৯০০ টাকা দিচ্ছিলাম। শুক্রবার আমার কিস্তি দেওয়ার দিন। এখন আমি কী করব?' ভাঙা দোকান থেকে জিনিসপত্র সরাচ্ছিলেন মুন্সি মইদুল ইসলাম ওরফে রনি।

    বলেন, 'আমার আড়াই আর তিন লাখের দুটো লোন চলছে। আর ৫ সপ্তাহ গেলেই প্রথম লোনটা শোধ হয়ে যেত। পরের লোন ৩৬ মাসের। এবার তো ব্যাঙ্ক বাড়িতে বাউন্সার পাঠাবে। গালিগালাজ, মারধর করবে।' সমস্যায় পড়েছেন ব্যাঙ্কের কালেকশন এজেন্টরাও। তেমনই এক জন এজেন্ট দিব্যেন্দু সাহা বলেন, 'এই এলাকায় আমার হাত ধরে শেষ ৬ মাসে ৯ লাখ টাকার লোন হয়েছে। আজই ১২টি দোকান থেকে কিস্তির টাকা আসার কথা অন্তত ১৫ হাজার টাকা। বেলা চারটে বাজে, এখনও একশো টাকা কেউ দেননি। আমিও কী করব জানি না।'

    একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজারের গলাতেও উদ্বেগের সুর। বলেন, 'এটা সত্যি যে, হকার উচ্ছেদের জের আমাদের ব্যাঙ্কেও পড়বে। বহু লোন অনাদায়ী হয়ে পড়বে। কিস্তির টাকা সময়ে জমা না পড়ার কারণে সুদ বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে সমস্যা তো হবেই।'
  • Link to this news (এই সময়)