• শিখতেই হবে নতুন আইন, আইনজীবীরা ফের যেন ছাত্র
    এই সময় | ০৩ জুলাই ২০২৪
  • ২৫ বছর ধরে আইপিসি, সিআরপিসি গুলে খাওয়া বর্ষীয়ান আইনজীবী এখন পিডিএফ আর গুগলে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছেন। কীভাবে বিএনএস (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা), বিএনএসএস (ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা) এবং বিএসএ (ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম)-এর ধারা প্রয়োগ করা হবে তা নিয়েই চলছে মনোযোগী পড়ুয়াদের মতো বই মুখস্ত করা।নতুন আইন লাগু হলেও জমে থাকা পুরোনো মামলার বিচার আর কতদিন চলবে, তা নিয়েই সন্দিহান বহু আইনজীবী। তবু এরই মধ্যে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন আইন মুখস্থ করতে চলছে কঠোর পরিশ্রম। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাজারে নতুন আইনের তেমন ভালো বই না আসা।

    দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে ফৌজদারি মামলা লড়ে আসছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। নয়া আইন প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য,'একটা সিস্টেমের মধ্যে এতদিন সকলে ছিলাম। সেখান থেকে রাতারাতি অন্য সিস্টেমে গেলে সমস্যা তো হবেই। নয়া আইনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অন্তত বছরখানেক সময় লাগে। পড়াশোনা করাটাও জরুরি। সেটা না করলে অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।'

    কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতের বিশেষ সরকারি কৌসুলি দীপঙ্কর কুণ্ডুর কথায়,'নতুন আইনের অনেক জটিল জায়গা রয়েছে। ফলে আমাদেরও নতুন করে দেখতে হচ্ছে, কোন কোন ধারায় কী কী বদল আনা হয়েছে। যে মামলাগুলি এখন চলছে, সেগুলি আগের আইন অনুযায়ী। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) আইনে আমাদের কোর্টে এখনও মামলা ওঠেনি।'

    পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশের নিরিখে শুধুমাত্র নিম্ন আদালতগুলিতে বর্তমানে জমে থাকা মামলার সংখ্যা সোয়া চার কোটি। বিভিন্ন হাইকোর্ট মিলিয়ে সেই সংখ্যা ৫৯ লক্ষ এবং সুপ্রিম কোর্টে পেন্ডিং মামলা ৮০ হাজার ৩৪৪। ফলে সব মিলিয়ে বিষয়টি সমস্যা বাড়াবে না তো?

    আইনজীবীদের বক্তব্য, 'আগামী দিনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে নতুন এবং পুরোনো মামলা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া। কারণ, আগের এবং নতুন আইনের মধ্যে সাজার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।' আদালতে সওয়াল করার সময়ে এসব মাথায় রেখে বিচারকের সামনে বক্তব্য পেশ করতে প্রথম কয়েকমাস সমস্যা হবে বলেই মনে করেন অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা, অয়ন চক্রবর্তীর মতো আইনজীবীরা।

    'মনে হচ্ছে যেন নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়েছি। কারণ, ফৌজদারি ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে আইনে। সেগুলো পড়তে হচ্ছে। আবার পুরোনো মামলা লড়ার জন্য পুরোনো ধারাগুলো ভুলে গেলেও চলবে না।' বক্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সৌমজ্যিৎ দাস মহাপাত্রর।

    অন্যদিকে, আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, 'যত পড়ছি, অবাক হচ্ছি। এরকম একটা একপেশে আইন চালু হচ্ছে। বিরোধীরা সেরকম কোনও প্রতিবাদ করল না?'
  • Link to this news (এই সময়)