• অবিশ্বাস্য! কুমিরকে 'অ্যারেস্ট' করা হল? আশ্চর্য, অদ্ভুতুড়ে ভয়ংকর এই কাজটি কোথায় ঘটল?
    ২৪ ঘন্টা | ০৩ জুলাই ২০২৪
  • অনুপকুমার দাস: অবশেষে বন দফতরের উদ্যোগে কৃষ্ণনগর জলঙ্গী নদীতে ঘুরে বেড়ানো কুমিরকে 'অ্যারেস্ট' করা সম্ভব হল। নদীতেই এক জায়গায় এটিকে আটকে রাখা হয়। পরে জাল নিয়ে এসে অন্যত্র ছাড়ার পরিকল্পনা করছে বনবিভাগ। 

    প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত নতুন শম্ভুনগর এলাকায় মৎস্যজীবীদের প্রথম চোখে পড়ে বিশালাকার এই কুমিরটি। এর পরে মাঝে-মধ্যে জলঙ্গি নদীতে ঘুরতে দেখা যেত কুমিরটিকে। গতকাল, অর্থাৎ, মঙ্গলবার সকালবেলাতেও তাকে দেখা যায় ষষ্ঠীতলা এলাকার নদীতে। আজ, ঘূর্ণি এলাকার একটি ভাটা থেকে বন দফতরের সহায়তায় কুমিরটিকে ধরা যায়। বনবিভাগ পৌঁছে জাল দিয়ে ধরে অন্যত্র ছাড়ার ব্যবস্থা করছে সেটিকে।

    ক'দিন আগেই রটে গিয়েছিল, কলকাতায় কুমির! মানে, কলকাতার গঙ্গায় কুমির। শোনা গিয়েছিল, এক-আধটা নয়, একেবারে তিন-তিনটি কুমির মুখ তুলেছে কলকাতার গঙ্গাবক্ষ থেকে! তখনই শোনা গিয়েছিল, তিলোত্তমা কলকাতার গঙ্গাও কি ক্রোকোডাইল রিভার হয়ে গেল! দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক চিরে বয়ে চলা ক্রোকোডাইল রিভারে দেখা মেলে বিশ্বের অন্যতম বিশালাকার কুমিরের, যা পরিচিত নাইল ক্রোকোডাইল নামে। কিন্তু তাই বলে প্রিয় শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শান্ত গঙ্গাতেও কুমির?

    গঙ্গার বুকে কুমিরের আতঙ্ক শুনে ঘুম ছুটেছিল প্রশাসনেরও! কলকাতা রিভার ট্রাফিক পুলিস খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছিল। কুমির-দর্শনের খবর শোনার পরেই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধান টিমও তৈরি করে ফেলেছিল বন দফতর।

    জানা গিয়েছিল, নানা সময়ে কুমিরগুলিকে নানা জায়গায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল। শুধু কলকাতা নয়, হাওড়ার আশপাশেও কুমিরের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। কলকাতা রিভার ট্র্যাফিক পুলিসের তরফে জানা গিয়েছিল, তারা মৎস্যজীবীদের কাছে জানতে পেরেছিল, খিদিরপুরের কাছে গঙ্গায় কুমির দেখা গিয়েছে। এদিকে অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছিল, আহিরীটোলার কাছে কুমিরের মতো কোনও এক প্রাণীকে গঙ্গায় দেখতে পাওয়া গিয়েছে! সেটির দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ-ছ'ফুটের মতো। 

    এসব খবরের জেরে মাথায় উঠেছিল গঙ্গায় সাঁতার। মাথায় উঠেছিল গঙ্গাস্নান। স্নান তো দূরের কথা, ঘাটে নামতেই ভয় পাচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। মৎস্যজীবীরা কোনও রকমে ভয়ে-ভয়ে মাছ ধরার কাজ করে যাচ্ছিলেন। 

    রাজ্য বন দফতরের ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে মূলত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী এবং খাঁড়িতে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। কলকাতার গঙ্গায় এখনও পর্যন্ত কোনও দিন কুমির দেখা যায়নি। যদিও তিনি বলেন, 'সুন্দরবন থেকে নদীপথে কলকাতায় কুমির চলে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতীতে ফারাক্কা এবং বর্ধমানের কালনার কাছে গঙ্গায় কুমির দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। তবে এবার খবরটা সত্যি কি না, আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সত্যিকারের কুমির হলে সেটা চিন্তার বিষয়। কারণ, আমাদের কাছে কুমির ধরার সরঞ্জাম নেই। সেক্ষেত্রে সুন্দরবন থেকে এক্সপার্টদের আনতে হবে।'

    তবে অনেকেই বলছেন, যা দেখা গিয়েছে, তা মোটেই কুমির নয়। ওগুলো ঘড়িয়াল। গত দু'তিন দিন ধরে ঘড়িয়ালকেই হুগলির ভদ্রেশ্বর এবং কলকাতার আশপাশে গঙ্গায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। কুমির না হয়ে ঘড়িয়াল হলে বিপদ কি কিছু কম? হ্যাঁ, বিপদ অবশ্যই কম। ঘড়িয়াল মোটেই কুমিরের মতো বিপজ্জনক নয়। ঘড়িয়ালরা মূলত নদীর মাছ খায়। ভয় পেলে তবেই তারা মানুষকে আক্রমণ করে, না হলে নয়। কলকাতা-হাওড়া তীরবর্তী গঙ্গায় গত দু'দিন ধরে যে প্রাণীটির সাক্ষাৎ মিলেছে, সেটি কুমির না ঘড়িয়াল তা নিয়ে সব মহলেই সন্দেহ আছে। তবে, তাতে সাধারণের মধ্যে আতঙ্কের কোনও কমতি নেই।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)