এই সময়: একটি নিউজ় চ্যানেলের ফেসবুক লাইভে এসএমএস পাঠিয়ে রাজ্যের এক মন্ত্রী ও শাসক দলের স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে নালিশ জানিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তাতে ওই দু’জনের মানহানি হয়েছে, এমন অভিযোগে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তবে যাঁদের মানহানির কথা বলা হয়েছে, সেই মন্ত্রী কিংবা স্থানীয় নেতা— কেউই পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাননি, অভিযোগ জানিয়েছিলেন অন্য দু’জন।হাওড়ার শিবপুরের ওই ঘটনা নিয়ে ধৃতের পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলে বুধবার তার প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ, একেবারেই এক জন ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ, নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালত নির্দেশ দেয়, বুধবারই বিকেল ৫টার মধ্যে ওই ব্যক্তিকে হেফাজত থেকে মুক্তি দিতে হবে। আদালতের আরও নির্দেশ, শিবপুর থানার ৩০ জুনের সারা দিনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে।
কারণ, রাজ্যের দাবি, ওই ব্যক্তিকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ ধৃতের পরিবারের অভিযোগ, তিনি নোটিস পেয়ে থানায় গেলে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর গ্রেপ্তার করা হয়। নবান্নে গত ২৪ জুন পুর-বিষয়ক প্রশাসনিক বৈঠকে জমি বেদখল ও জলা ভরাট নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি নিউজ় চ্যানেল তাদের ফেসবুক লাইভে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠক সম্প্রচার করে এবং মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে নাগরিকদের বক্তব্য বা অভিযোগ জানানোর জন্য এসএমএস পাঠাতে বলে।
সেখানেই এসএমএস করে হাওড়া সদরের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় এবং শাসক দলের স্থানীয় নেতা সৈকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে জলা ভরাটের নালিশ জানিয়েছিলেন শিবপুর এলাকার শাহিন ওরফে এরশাদ সুলতান। শিবপুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে শাহিনকে। এ দিন হাইকোর্টের প্রশ্ন, ‘কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে বা কোনও নাগরিক তাঁর ক্ষোভ জানালেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে?’
বিচারপতির বক্তব্য, ‘যাঁর বিরুদ্ধে তিনি (শাহিন) বলেছেন, সেই অরূপ রায় কি অভিযোগ করেছেন? করেননি। এটা একেবারেই পুলিশের নাক গলানো। যেখানে পুলিশের ঢোকার কোনও এক্তিয়ার ছিল না। দু’জনের মধ্যে গোলমাল বা কাদা ছোড়াছুড়ি হলো, আর তৃতীয় ব্যক্তি অভিযোগ জানানোয় এক জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলো! এটা আইন?’
ধৃতের পরিবারের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ও পিন্টু কাঁড়ার জানান, নিউজ় চ্যানেলের ফেসবুক লাইভে শাহিন হাওড়ার নির্দিষ্ট দু’টি জায়গার নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, ওই দু’টি বেআইনি নির্মাণ ও বেআইনি ভাবে জলা ভরাটের পিছনে বিধায়ক ও মন্ত্রী এবং স্থানীয় নেতার মদত রয়েছে। এর পরিণাম হলো— প্রথমে শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে ওই দু’জনের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। পরে ‘ফল ভুগতে হবে’ বলে তাঁকে হুমকিও দেয় কয়েক জন।
শাহিন ২৮ জুন এই নিয়ে শিবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু সে দিনই বিকেলে পর পর দু’টি পৃথক অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের বক্তব্য, শাহিনের ওই বক্তব্যের ফলে বিধায়ক এবং স্থানীয় ওই নেতার মানহানি হয়েছে। তার পরেই পুলিশ তদন্তে নেমে ৩০ জুন তাঁকে নোটিস দিয়ে ১ জুলাই থানায় হাজির হতে বলে।
হাইকোর্টে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ওই ব্যক্তিকে নোটিস দেওয়া হলেও তিনি তা নিতে অস্বীকার করেন। তার পরেই ওই দিন তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারপতির প্রশ্ন, ১ জুলাই তিনি হাজিরা দেওয়ার আগেই কেন গ্রেপ্তার করা হলো?