• গণপিটুনি বন্ধে আজ বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা
    এই সময় | ০৪ জুলাই ২০২৪
  • এই সময়: একের পর এক গণপিটুনি এবং হিংসার ঘটনা নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অত্যন্ত কড়া হাতে এ ধরনের হিংসার মোকাবিলা করতে পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্যাপক প্রচারও চালাতে বলেছেন।এই পরিস্থিতিতে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটে নাগাদ আলিপুরের ‘সৌজন্য’ সভাগৃহে বিদ্বজ্জনেদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বৈঠকে তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলায় ক্রমশ বেড়ে চলা গণপিটুনির ঘটনা এবং হিংসার মনোভাব ঠেকাতে মানুষকে সচেতন করার কাজে বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ চাইতে পারেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

    নবান্ন সূত্রের খবর, বৈঠকে রাজ্যের শিল্প-সংস্কৃতি জগতের গণ্যমান্যরা ছাড়াও লোকসভা ভোটের আগে যে ‘দেশ বাঁচাও গণতন্ত্র বাঁচাও মঞ্চ’ তৈরি হয়েছিল, তার বেশ কয়েকজন সদস্যকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শেষবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্বজ্জনেদের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল গত দুর্গাপুজোর বিজয়া সম্মিলনীতে। দীর্ঘদিন বাদে মুখ্যমন্ত্রী আবার তাঁদের নিয়ে বৈঠকে বসায় রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

    ঠিক কী কারণে মুখ্যমন্ত্রী বিদ্বজ্জনেদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন, সে সম্পর্কে প্রশাসনের তরফে কিছু খোলসা করা হয়নি। দলের নেতা-মন্ত্রীরাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এমনকী যাঁরা বৈঠকে ডাক পেয়েছেন, তাঁরাও এ বিষয়ে অন্ধকারে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে তাঁদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আলোচ্য সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। কয়েকজনকে আবার বলা হয়েছে, সৌজন্য বিনিময় করতেই এই অনুষ্ঠান। সে রকম কোনও গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে না।

    মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বৈঠকে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে আমাকে একজন ফোন করেছিলেন। আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, অ্যাজেন্ডা কী? উত্তরে উনি বললেন, শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে ডেকেছেন।’

    তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী যদি গণপিটুনি নিয়ে আমার কাছে জানতে চান তা হলে আমার মতো করে যেটুকু বলার নিশ্চয়ই বলব। তবে আমার মনে হয় শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে সচেতনতা গড়ে ওঠে না। মারামারি, পেটাপেটি, এগুলো আসলে সবই নিজের ক্ষমতা জাহির করা। প্রশাসনিক ভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে।’

    রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বিদ্বজ্জনেদের সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী বরাবর সুসম্পর্ক রেখে চললেও সম্প্রতি তাতে কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে। বিজেপি-কে আটকাতে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের যে রকম সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল, এবারের লোকসভা ভোটে তা দেখা যায়নি। বিভিন্ন কারণে তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্যের বিদ্বজ্জনেদের একটা অংশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

    সেটা যাতে ফাটলের আকার না-নেয়, তার জন্য আবার নতুন করে সম্পর্ক মেরামত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কারণেই লোকসভা ভোট মিটতে না-মিটতে এই বৈঠক। বিশেষ করে গণপিটুনি যখন রাজ্যে সামাজিক ব্যাধির আকার নিচ্ছে, তখন বিদ্বজ্জনেদের কাছে পরামর্শ চেয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
  • Link to this news (এই সময়)