রাজভবনে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে দিল্লিতে বসে রাজ্যপাল
প্রতিদিন | ০৪ জুলাই ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: দিল্লি থেকে এখনও কেন ফিরছেন না রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস? বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি রাজধানীতে রয়েছেন। তাঁর এই দিল্লিবাসের নেপথ্যে রহস্য কী? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে বুধবার জানা গিয়েছে, কলকাতায় রাজভবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি শহরে ফিরবেন না। কার্যত এমনই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দিল্লিতেও। রাজভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থাকতে চান তিনি। বস্তুত, এই প্রস্তাব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরেও দরবার করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট একাধিক রাজনৈতিক কর্তাদের সঙ্গেও কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কথাও বলেছেন রাজ্যপাল।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখনও অবধি পুরোদস্তুর সবুজ সংকেত পাননি বোস। কারণ, কলকাতার রাজভবনকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে দিলে ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে কেন্দ্র—রাজ্য সম্পর্কেও। আর সেই কারণেই রাজ্যপাল বোসকে এখুনি কিছু না বলেও বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিভিন্ন মহলে মতামত চাইছে। সূত্রের খবর, রাজ্যপাল যতটা না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ তার চেয়ে অনেক বেশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কাছের মানুষ। আর তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দুই লবির মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের জেরেও কলকাতার রাজভবন নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যাচ্ছে না বলে খবর। যদিও অজিত ডোভাল শিবির দ্রুত রাজ্যপাল বোসের প্রস্তাব মেনে রাজভবনকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তথা অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ অফিসাররা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন বলে রাজধানীর নর্থ ব্লক সূত্রে খবর।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের তিন শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। গত ৬ জুন ও ২০ জুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা দুই চিঠিতে সর্বভারতীয় চাকরির শর্ত এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ওই তিন অফিসারকে অভিযুক্ত করেছেন বোস। এই অফিসাররা হলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
রাজভবন সূত্রে খবর, এর আগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর তদন্ত করার অভিযোগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট ডিসি—কে অপসারণ করানোর সুপারিশ করেছিলেন রাজ্যপাল। দিল্লির নর্থ ব্লক সূত্রে খবর, বোসের চিঠি পেয়ে কার্যত হতবাক হয়ে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকরা। কারণ, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালরা সংশ্লিষ্ট প্রদেশের নানা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পাঠালেও এভাবে কখনও সেখানকার সরকারের শীর্ষস্তরের অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ আজ পর্যন্ত করেনি। গত ২০ জুন শাহকে যে চিঠি রাজ্যপাল লিখেছেন সেখানে মুখ্যসচিব, পুলিশ কমিশনারের নাম করে রাজভবন কাণ্ডের তদন্তের প্রসঙ্গও তুলেছেন।