বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ঠিক যেন বিদেশ যাত্রা! শিলিগুড়ির বাড়ি থেকে বের হয়ে ছোট গাড়ি নিয়ে ছুটলেন। তখন ঘড়িতে ভোর পাঁচটা। গন্তব্য গ্যাংটক। জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকায় সেভক থেকে ওদলাবাড়ি, গরুবাথান, লাভা, আলগাড়া, মুনসং হয়ে গন্তব্যস্থলে যখন থামলেন ঘড়ির কাঁটা বিকেল চারটার ঘরে। বারো ঘন্টার সফর। রীতিমতো বিপর্যস্ত কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা মোবাইল ফোনে বলেন, “ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। ঘুরপথের রাস্তাও বেহাল। এভাবে মানুষ চলাফেরা করতে পারে!”
নাহ, করতে পারে না। যারা নিরুপায় হয়ে শিলিগুড়ি থেকে সিকিমমুখী হচ্ছেন জানেন না কখন গন্তব্যে পৌঁছবেন অথবা আদৌ পৌঁছতে পারবেন কিনা! অথচ সড়কপথে চারঘণ্টায় শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকে পৌঁছে যাওয়ার কথা। তবে এবারই এমন ঘটনা প্রথম নয়। ফি বছর বর্ষায় সিকিম সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেখে কে বলবে সিকিম পর্যটন নির্ভর রাজ্য। ওই রাজ্যের নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী শিলিগুড়ি থেকেই সরবরাহ হয়ে থাকে! উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এটা বাৎসরিক উৎসবে পরিনত হয়েছে। বর্ষা এলেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি।” পরিস্থিতি নিয়ে বেজায় চটেছে ট্যুর অপারেটর সংস্থা ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’। তারা একই দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছেন।
ভূমিধসে বিধ্বস্ত শিলিগুড়ি-সিকিম সড়কপথে যাতায়াতের ‘লাইফ লাইন’ নামে পরিচিত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক কয়েকদিন থেকে অবরুদ্ধ। কবে খুলবে কেউ জানে না। ঘুরপথে গ্যাংটকে পৌঁছতে সময় লাগছে কম করে দশ ঘণ্টা। অনেকে বারো ঘণ্টায় পৌঁছচ্ছেন। যেমন গোপীনাথবাবু। সেটাও রীতিমতো বিপজ্জনক। ওই পরিস্থিতিতে সিকিম কার্যত বিচ্ছিন্ন হতে বসেছে। বর্ষা এলেই সড়কপথের এমন বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ আড়াল করেননি সিকিমের সাংসদ ইন্দ্র হ্যাং সুব্বা। মঙ্গলবার তিনি লোকসভায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। এর আগে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং গোলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কেন ক্ষোভ বাড়বে না! সেই যে বিড়িকধারা, গেইলখোলায় ভূমিধস শুরু হয়েছে আর থামেনি।
কালিম্পংয়ের জেলা শাসক বালাসুব্রহ্মণিয়ান টি জানান, কয়েকটি জায়গায় ধস নেমেছে। ধস সরিয়ে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু একদিকে ধস না সরাতে অন্যদিকে মাটি-পাথর গড়িয়ে নামছে। তাই প্রশাসনের তরফে সেবক-লাভা-আলগাড়া হয়ে গ্যাংটকে যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭২ কিলোমিটার বেশি রাস্তা অতিক্রম করতে হচ্ছে। ওই রাস্তাও ভেঙে চুরমার হতে বসেছে। বিশেষত মংপং, গরুবাথান, আলগাড়া এলাকার পরিস্থিতি ভালো নয়। স্বভাবতই সংশয় বাড়ছে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কতদিন যাতায়াত সম্ভব হবে তা নিয়েও।