প্রতি দোকানে গড়ে ১০-১৫ শতাংশ ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ড বাতিল, ইডিকে তথ্য দিল রাজ্য
প্রতিদিন | ০৪ জুলাই ২০২৪
অর্ণব আইচ: প্রত্যেক রেশন দোকান থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ড বাতিল করেছে রাজ্য সরকার। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে বিস্তারিত তথ্য পাঠাল রাজ্য। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের পক্ষে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে এই তথ্যগুলি পাঠানো হয়। ইডির সূত্র জানিয়েছে, রেশন বন্টন দুর্নীতির তদন্তে প্রচুর ভুয়ো রেশন কার্ডের তথ্য সামনে আসে। ইডির দাবি, প্রত্যেকটি জেলায় রেশন বন্টন দুর্নীতির হাত ধরে তৈরি হয় ভুয়া রেশন কার্ডের চক্র। অনেক ক্ষেত্রেই কোনও পরিবারের সদস্যর মৃত্যু হলে ভুয়ো চক্রটি সেই মৃত ব্যক্তির রেশন কার্ড নিজেরাই হস্তগত করত।
এছাড়াও এক এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার পরও কেউ রেশন কার্ড জমা না দিলে সেগুলিও কাজে লাগানো হত। একই সঙ্গে ভুয়া ব্যক্তিদের সামনে রেখে তাদের নাম ও পরিচয় দিয়েও রেশন কার্ড তৈরি করা হত, এমনও অভিযোগ উঠেছে। ধান ও গমের কল থেকে কার্ডের সংখ্যার ভিত্তিতে সেই পরিমাণ চাল ও আটা রেশন দোকানগুলিতে পাঠানো হয়। তদন্তে প্রকাশ, অতিরিক্ত পরিমাণ চাল ও আটা মিল থেকে বেরিয়ে ফের বন্দি হয়ে ফিরে আসে মিলগুলিতে। নতুন আটার সঙ্গে পুরনো তথা নিম্নমানের আটা মিশিয়ে ফের পাঠানো হত রেশন দোকানগুলিতে। এই ব্যাপারে সুবিধা নেওয়ার জন্যই প্রয়োজন হত ভুয়ো রেশন কার্ডের। ভুয়ো রেশন কার্ডের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা এই কাজে সাহায্য করত রেশন বন্টন দুর্নীতি চক্রের মাথাদের।
ইডির গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পারেন যে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেই ভুয়া রেশন কার্ড শনাক্ত করে সেগুলি বাতিল করা হয়। সেই সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। সেই কারণেই কয়েক মাস আগে ইডির পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে জানতে চাওয়া হয়, ২০১২ সালের পর থেকে রাজ্যে কত ভুয়া রেশন কার্ডের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল? কত রেশন কার্ডই বা বাতিল করেছিল রাজ্য সরকার? ইডির সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি এর উত্তর এসেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইডিকে বিস্তারিত নথি পাঠানো হয়। ওই নথিগুলিতেই জানানো রয়েছে যে, প্রায় প্রতে্যক রেশন দোকান থেকেই ভুয়া রেশন কার্ড শনাক্ত করা হয়েছিল।
কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় থাকা রেশন দোকানগুলির একেকটি থেকে ৫০০ থেকে ৮০০ পর্যন্ত ‘ভুয়ো’রেশন কার্ড দফায় দফায় বাতিল করা হয়। ইডিকে দেওয়া রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একেকটি রেশন দোকান থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রেশন কার্ড ‘ভুয়ো’ হিসাবে শনাক্ত করে সেগুলি বাতিল করা হয়। এবার ওই পরিসংখ্যান ও তথ্যগুলির ভিত্তিতে ইডি আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেছেন। পরবর্তী সময়ে এই মামলায় কোনও অতিরিক্ত চার্জশিট দাখিল করলে এই তথ্যগুলি কাজে লাগানো যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।