এই সময়, কৃষ্ণনগর: ছোড়া হয় দূর থেকে। মাটিতে পড়ে ফেটেও যায় এ বোমা। কিন্তু বিস্ফোরণ হয় না। বরং সেই জায়গা থেকে গজিয়ে ওঠে গাছ। নাম সিড-বম্ব বা বীজ-বোমা। পরিবেশ বাঁচাতে এবং গাছ লাগানোর বার্তা পড়ুয়াদের মনে গেঁথে দিতে নদিয়ার রানাঘাট মহকুমার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাতেকলমে শেখানো হচ্ছে বীজ-বোমা তৈরির পদ্ধতি।টিফিন টাইমে বীজগাঁথা সেই মাটির গোল্লা স্কুল লাগোয়া ফাঁকা জমিতে ছুড়ে ফেলার সময়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকছেন স্যরেরাও। তুলনায় ছোট মাটির গোল্লা গুলতি দিয়ে ছোড়ার সময়ে খেলার মজা পাচ্ছে অনেকে। সম্প্রতি বনদপ্তর বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের পাথুরে ন্যাড়া অঞ্চলগুলিতে এই বীজ-বোমা ফেলা শুরু করে পরীক্ষামূলকভাবে। প্রথমধাপে তা সফল হয়েছে। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে এই বীজ-বোমা।
রানাঘাট শহর সংলগ্ন মিলনবাগান শিক্ষা নিকেতন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পরিবেশ সচেতনতার পাঠ শুরু হয়েছে এক মাস আগে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয়কৃষ্ণ চাকি বলেন, ‘দেশজুড়ে যত গাছ কাটা হয় তত গাছ কিন্তু লাগানো হয় না। গাছ লাগানোর ব্যাপারে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত না করলে বিপদ সবার। তাই স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে বীজ-বল বা সিড-বম্ব তৈরির ওয়ার্কশপ করেছি। হাতেকলমে শিখে ছাত্রছাত্রীদের অনেকে বাড়ি থেকে এ রকম গোল্লা তৈরি করে স্কুলে এনেছে।’
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘প্রথমে কাদামাটির সঙ্গে গোবর আর ছাই মিশিয়ে নাড়ু বা মোয়ার মতো গোল্লা তৈরি করা হয়। তারপর আঙুলের একটা চাপে ভিতরে জাম, খেজুর, তেঁতুল, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদির একটা বা দু’টো করে বীজ ভিতরে গেঁথে মুখটা মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। পরে রোদে শুকিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় বীজ-বল বা সিড-বম্ব। জল-কাদার জায়গায় বা বর্ষার দিনে কোনও জমিতে ফেললে জলে ভিজে গিয়ে বীজটি অঙ্কুরিত হয়। অল্প কিছুদিন পরেই চারা গাছ বের হয়।’
শুধু নিজেদের জন্য নয়, কোনও পঞ্চায়েত বা পুরসভা চাইলে সিড-বল দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কালীগঞ্জ ব্লকে ভাগীরথী সংলগ্ন নয়াচর গ্রামের যুবক গণেশ চৌধুরী কিংবা কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের পরিবেশ সচেতন মহিলা পাপিয়া কর এর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন বীজ-বোমা তৈরি করে বিভিন্ন গ্রামে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ বার স্কুল পড়ুয়াদের হাতেও গাছ লাগানোর ‘বোমা’ আসায় খুশি তাঁরা।