বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর পথ কী? জনতার মতামত চেয়ে দলের অন্দরেই নিন্দিত আলিমুদ্দিন!
প্রতিদিন | ০৫ জুলাই ২০২৪
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ভোটে বিপর্যয়ের পর জনতার দরবারে ইমেল মারফত পরামর্শ চাইছে সিপিএম। পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে কীভাবে, মানুষ কী চাইছে, তা জানতে এতদিন পর আমজনতার শরণাপন্ন হওয়া নিয়ে দলের সমর্থকদের সমালোচনা ও কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্য নেতাদের। দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তৈরি বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে কটাক্ষ, ‘এতদিন পরে তাহলে জনতার পরামর্শ নেওয়ার কথা মনে পড়ল সিপিএমের। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এতদিনে সিপিএম পার্টির জনগণের কথা মনে পড়ল? সিপিএম পার্টি কবে জনগণের অনুভূতির মূল্য দিয়েছে? যখন জনগণ প্রকৃতপক্ষে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল নিজেদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে ভেবে নিয়ে, তখনও জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার কোনও মূল্য দেওয়া হয়নি।’
জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি পার্টি! শুধু এটাই নয়, ইউপিএ সরকারে সিপিএমের অংশগ্রহণ না করা, পরমাণু চুক্তির দোহাই দিয়ে কংগ্রেসের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া হোক বা স্পিকার ইস্যুতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেবহিষ্কার, সব ইস্যুতেই নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, জনগণের কথার কোনও মূল্যই দেয়নি পার্টি। শুধু তাই নয়, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বলা হয়েছে, বামফ্রন্ট যখন ক্ষমতায় তখন কেউ কোনওরকম সমালোচনাই করতে পারত না। তখন কেউ সমালোচনা করলে তাকে হাতে মারা হত না, পাতে মারা হত। পার্টির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের কমেন্টেও একাধিক সমালোচনামূলক মন্তব্য উঠে এসেছে। জনৈক সমর্থক লিখেছেন, “সৎ, অকপট এবং স্পষ্টভাবে সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার পরিবেশ গড়ে তুলুন।” কেউ লিখেছেন, “বুথভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, মিশে যেতে হবে মানুষের সঙ্গে, আসলে কী চাইছে তারা সেটা বুঝতে হবে।” একই সঙ্গে আবার মানুষের মতামত নিতে টোল ফ্রি নম্বর চালু করার দাবিও উঠেছে।
এদিকে, লোকসভা নির্বাচনী পর্যালোচনায় বসেছিল কলকাতা জেলা সিপিএমও। শহরে দলের ফলাফল নিয়ে রিপোর্টে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মনে করা হচ্ছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম ও বিজেপির ভাষা এক ছিল। বিজেপি বিরোধী প্রচারের বিষয় কী হতে পারে সে বিষয়ে কমরেডদের ধারণা ও চর্চাও কম ছিল। এটার প্রভাব পড়েছে ভোটে। এছাড়াও পর্যলোচনায় যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে তা হল, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিকল্প কোনও প্রচার পার্টি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই, বস্তি অঞ্চলে বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছে। তিন, বিজেপিকে আটকাতে পারে তৃণমূল, এই ধারণাই ছিল মানুষের মনে। চার, সিপিএম কি কেন্দ্রীয় সরকারে আদৌ যাবে, সেই প্রশ্নও ছিল মানুষের মনে। পাঁচ, আরএসএসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রচারে ব্যাপক ঘাটতি ছিল দলের। ছয়, আইএসএফে সিপিএমের ক্ষতি করেছে। সাত, সোশাল মিডিয়ার গণ্ডি ছেড়ে অনেক ক্ষেত্রেই বেরনো যায়নি। আট, প্রার্থী বাংলা ভালো বলতে পারেন না, এই কথাও কয়েকজন বলেছেন। নয়, বিজেপির সোশাল মিডিয়ায় উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল। দশ, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রে খারাপ ছিল।