আইবুড়ো ভাত নিয়ে জোর চর্চা। শিরোনামে বিডিও-র প্রাক বিবাহ ভোজ পর্ব। কখন হয়েছিল আইবুড়ো ভাত? খতিয়ে দেখছে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। অফিস টাইমে হলে সার্ভিস অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন প্রশাসনিক কর্তারা। জেলা প্রশাসনের অন্দরে কানাঘুষো এমনটাই। ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের পক্ষ থেকে বিডিওর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। বর্ধমান-১ ব্লকের বিডিও রজনীশ কুমার ইতিমধ্যে জবাব দিয়েছেন বলেই খবর। তা খতিয়ে দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা আড়াআড়ি বিভক্ত। রাজ্যের প্রশাসনিক দফতরগুলিতে বৃহস্পতিবার থেকে এই ঘটনা নিয়ে চলছে চর্চা। একপক্ষ বলছেন, 'খুব নর্মাল একটা বিষয়কে রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে বড় করা হচ্ছে।' অন্যপক্ষের পালটা যুক্তি, 'বিডিওর প্রোটোকল জানা উচিত।'
বুধবার বর্ধমান-১ ব্লকের বিডিও রজনীশ যাদব পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের ঘরে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের আয়োজন করা আইবুড়ো ভাত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, কী ভাবে বিডিও অফিসে এমন অনুষ্ঠান হল এবং সেখানে তিনি মধ্যমণি হয়ে রইলেন। তৃণমূল নেত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম এই পুরো ঘটনায় লাগিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক রং! স্বাভাবিক ভাবেই তেড়েফুঁড়ে উঠেছে বিরোধীরা। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বিডিওকে জড়িয়ে ধরছেন ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানস ভট্টাচার্য। পঞ্চায়েত সদস্য তথা ব্লক সভাপতি কাকলি গুপ্ত তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন বিডিও।
ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিসেস রুলস ১৯৮০
বর্ধমান উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাসকে এ বিষয়ে ফোন করা হলে এই সময় ডিজিটাল-কে তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম থেকে বিষয়টি জানার পর, বিডিও'র থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। এরপর নিয়ম অনুযায়ী যা হওয়ার হবে।’ এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। প্রশাসনের অন্য আর এক কর্তা বলছেন, 'বিডিও ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সময়টা সবার আগে জানার চেষ্টা হচ্ছে। তারপরেই এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে আদৌ নেওয়া হবে কি না তা ঠিক হবে।'
West Bengal Services (Duties, Rights and Obligations of the Government employees) Rules, 1980 -তে সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য, অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে। সেখানে অবশ্য এমন অনুষ্ঠান নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলা না থাকলেও এ ধরনের বিষয় থেকে সরকারি কর্তাদের বিরত থাকতেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের ট্রেনিংয়ের সময়ও এ ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক করা হয়ে থাকে। কর্তব্যে স্পষ্ট বলা রয়েছে, 'দায়িত্ব পালনের সময় তাঁকে ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সততা, নিরপেক্ষতা এবং কর্তব্যে নিষ্ঠাবান হতে হবে।' নিয়ম ভাঙলে শাস্তির সংস্থানও আইনে রয়েছে।
সার্ভিস রুল
রাজ্য় প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, 'এসবের পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুল ভলিউম-ওয়ানে পরিষ্কার বলা আছে, কোনও সরকারি আধিকারিক ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের পারমিশন ছাড়া ডিউটির সময়ে অন্য কোথাও উপস্থিত থাকলে সেটা তাঁর 'আন-অথরাইজড লিভ' হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সেদিনের জন্য মাইনে কাটা যেতে পারে।'
সার্ভিস বুক
এ বিষয়ে জানতে যদি বিডিওর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। সাংবাদিকরা তাঁর অফিসে গেলেও কথা বলতে চাননি। রাজ্যের প্রাক্তন আমলা সুশান্ত চক্রবর্তী এই সময় ডিজিটাল-কে বলেন, 'ভিডিয়োটি দেখেছি। অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছি। চেয়ার-পদের একটা গরিমা আছে। কোনও অবস্থাতেই তা হানি করলে চলবে না। West Bengal Services Rules, 1980 তো পরিষ্কার বলা আছে, একজন সরকারি কর্মচারী সবার আগে সুনাগরিক হবেন। এবার সুনাগরিক হতে কী কী করতে হবে তা তো একজন আমলাকে বলে দেওয়ার দরকার হয় না বলেই মনে হয়। আমলাতন্ত্রের গরিমা নষ্ট না করলেই পারতেন। আমার তো মনে হয় এই ঘটনায় আইন অনুযায়ী শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।'