ঐতিহ্যের সম্ভার ‘নব নীলাচল’, মাহেশের রথকে ইউনেস্কো স্বীকৃতির দাবি
এই সময় | ০৭ জুলাই ২০২৪
খিচুড়ি, অন্ন,পায়েস। এই তিন নিয়ে মাহেশ। বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা হিসাবে খ্যাতি রয়েছে মাহেশের রথ যাত্রার।পুরীর পর দেশের বৃহত্তম রথযাত্রা হুগলির মাহেশের রথযাত্রা। এবার মাহেশের রথ যাত্রা ৬২৮ বছরে পড়ল। মাহেশ জগন্নাথ দেব ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকে মাহেশের রথকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানানো হল। পাশাপাশি, বালা সন্দেশ ও গুটকে সন্দেশও যাতে জিআই ট্যাগ পায়, সে ব্যাপরে আবেদন জানানো হয়েছে।মার্টিন বার্ন কোম্পানীর তৈরি লোহার রথের বয়স ১৩৮ বছর। মাহেশে আগে ছিল কাঠের রথ। পরবর্তীতে তা লোহার রথ হয়। এবারও রথযাত্রা হচ্ছে মহা সমারোহে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রতিদিনই নিত্য সেবা হয়। তবে জগন্নাথ দেবের প্রসাদে থাকে বালা সন্দেশ ও গুটকে সন্দেশ। এই সন্দেশকে ঘিরেই রয়েছে ইতিহাস। জানা যায় , প্রভু জগন্নাথকে মিষ্টি হিসেবে এখানে যে ভোগ নিবেদন করা হয় তা বালা সন্দেশ এবং গুটকে সন্দেশ। যদিও তারও একটা ইতিহাস রয়েছে বহু শতক পূর্বে।
বহু প্রাচীন ইতিহাস আছে গুটকে সন্দেশ এবং বালা সন্দেশ স্নানযাত্রার দিন ঠাকুর কমলাকর পিপলাই দেখেন প্রভুর হাতে বালা নেই। তখন তিনি মনের দুঃখে মাটিতে বসে পড়েন। জগন্নাথ দেব এক বালকের ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন চাতরা নিমাই তীর্থ ঘাটের সন্নিকটে এক মোদকের দোকানে। সেখানে তিনি পেটপুরে গুটকে সন্দেশ এবং বালা সন্দেশ খেয়েছিলেন। পাঁচ পয়সা দাম চান মোদক, যদিও সেই দাম তাঁর কাছে ছিল না। তখন মোদক জিজ্ঞেস করে আপনার বাড়ি কোথায়? বালক বলে আমার বাড়ি মহেশ ? নাম জগবন্ধু চক্রবর্তী। বালক তখন বলেছিলেন আমি কারও কাছে ঋণী হয়ে থাকতে পারবো না । আমি আমার হাতের বালা আপনাকে দিয়ে গেলাম অন্য কেউ এসে এই বালা ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। সেদিন রাত্তিরে কমলাকর ঠাকুর পিপলাইকে স্বপ্নাদেশ দেন চাতরার এক মোদকের দোকানে বালা আছে। তখন তিনি সত্তর গিয়ে ওই বালা ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। এরপর মোদক যখন সিন্দুক থেকে বালা বার করে দেন, তখন দেখা যায় বালা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। তখন কমলাকর মোদককে আলিঙ্গন করেন এবং পায়ে প্রণাম করে বলেন যে আপনি আমার সাক্ষাৎ জগন্নাথ। যেহেতু জগন্নাথ দেব আপনার হাত থেকে মিষ্টি খেয়েছে । আর এভাবেই ইতিহাসে বিজড়িত হয়ে আছে গুটকে সন্দেশ এবং বালা সন্দেশ।
মাহেশের মহাপ্রভুর মাহাত্ব গোটা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে আছে। সেই সব ইতিহাস বা তথ্য পুঁথি সম্মিলিত করে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিলে গৌরবময় ইতিহাস তৈরি হবে শ্রীরামপুরের বুকে। কলকাতায় যেমন দুর্গাপুজো স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই মাহেশ জগন্নাথ দেবের ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারের প্রশাসনিক দফতরের এই আবেদন জানান হয়েছে। সরকারি সাহায্য পেলে এই উদ্যোগ সফলতা পাবে। আর সেই দিকেই তাকিয়ে আছে শ্রীরামপুরবাসী।
মাহেশ জগন্নাথ দেব ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক পিয়াল অধিকারী জানান, জগন্নাথ দেবের ইতিহাস সর্বজনবিহিত। মাহেশের ইতিহাসের সাথে বিজড়িত হয়ে আছে জগন্নাথ দেবের ইতিহাস গুটকে সন্দেশ এবং বালা সন্দেশ। আমি এই নিয়ে উদ্যোগ হয়েছি। যে সমস্ত ভক্তরা আসে তারা বালা সন্দেশ এবং গুটকে সন্দেশ দিয়ে প্রভুকে নিবেদন করেন। তাই কেন গুটকে সন্দেশ এবং বালা সন্দেশ জিআই স্বীকৃতি দেয়া হবে না। আর এই নিয়েই ডিএম এর কাছে চিঠি দিয়েছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।