• দূষণ বন্ধে ফিল্টার করা হোক টয় ট্রেনের ধোঁয়া, রেলকে আর্জি জিটিএ-র
    এই সময় | ০৭ জুলাই ২০২৪
  • পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কু ঝিক ঝিক শব্দ করতে করতে এগিয়ে চলেছে টয় ট্রেন। স্টিম ইঞ্জিনের চিমনি দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। সেই ধোঁয়া মেঘের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে— পাহাড়ে, গাছপালায়। কী সুন্দর ও রোমাঞ্চকর, তা-ই না? দার্জিলিং পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা ওই দৃশ্যে, শব্দে রোমাঞ্চিত বোধ করলেও পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তা ক্রমেই বিভীষিকার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।কারণ, টয় ট্রেনের কয়লার ইঞ্জিনের ধোঁয়া থেকে পাহাড়ে ছড়াচ্ছে ভয়াবহ দূষণ। বিষাক্ত ধোঁয়া অনবরত ফুসফুসে ঢোকায় হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট-সহ বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছেন পাহাড়ের বহু মানুষ। এই ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে প্রশাসনের কাছে। এই পরিস্থিতিতে টয় ট্রেনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য দিন কয়েক আগে নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে জ়োনের কাটিহারের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারকে চিঠি দিয়েছেন জিটিএ-র প্রধান সচিব।

    নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে জ়োনের অধীন দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে এখন দার্জিলিংয়ে টয় ট্রেনের পরিষেবা দেখভালের দায়িত্বে।

    সম্প্রতি জিটিএ-র তরফে রেলকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে— দূষণ কমাতে টয় ট্রেনের ধোঁয়া ফিল্টার করে ছাড়া হোক। টয় ট্রেনের কয়লার ইঞ্জিন থেকে যে ধোঁয়া বেরোয়, তাতে অনেক দূষিত কণা মিশে থাকে। যেগুলো মানবদেহের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।

    সেই ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ইঞ্জিনের খোলনলচে বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে জিটিএ। তাদের মতে, সে জন্য প্রয়োজন হলে নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হোক। এই নিয়ে হিমালয়ান রেলওয়ের অধিকর্তার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন জিটিএ-র কর্তারা।

    জিটিএ-র প্রধান সচিব সৌম্য পুরকাইতের কথায়, ‘টয় ট্রেন এখনও পুরোনো আমলের কয়লার ইঞ্জিন দিয়ে চলে। যে কারণে তা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেটাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই ধোঁয়া যাতে ফিল্টার করে ছাড়া হয়, আমরা সেই প্রস্তাব রেখেছি রেলের কাছে। যাতে দূষণ আটকানো যায়।’

    টয় ট্রেনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রেললাইনের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, সেতু ও কালভার্ট মেরামতি এবং স্টেশন চত্বরকে সব সময়ে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রেলকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে, রেললাইন ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় রাস্তায় যান চলাচলে অসুবিধে হচ্ছে। এতে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

    দার্জিলিংয়ে যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদের অনেকেই টয় ট্রেনে চড়ে বাতাসিয়া লুপ স্টেশন পর্যন্ত যান। যেখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ওয়ার মেমোরিয়াল। যার রক্ষণাবেক্ষণ করে জিটিএ। সেই খরচ চালাতে বাতাসিয়া লুপ স্টেশন থেকে রেলের যা রোজগার হয়, তার ৫ শতাংশ জিটিএ-কে দেওয়ার প্রস্তাবের কথা জানানো হয়েছে।

    পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘বিদেশেও বহু জায়গায় কয়লার ইঞ্জিনে ট্রেন চলে। দূষণ যাতে কম হয়, সে জন্য সে সব জায়গায় উচ্চমানের কয়লা ব্যবহার করা হয়। এখানেও যদি সেটা করা যায়, তা হলে টয় ট্রেনের ধোঁয়া ও দূষণ দু’টোই কমবে।’
  • Link to this news (এই সময়)