এই সময়: পাহাড়ে ধস নতুন কিছু নয়। দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ধস আর দেশের পাঁচটা পাহাড়ি এলাকার মতোই চেনা বিপদ। কিন্তু খাস দার্জিলিং শহরেই ধস নেমেছে— এমন কথা সাম্প্রতিক অতীতে তেমন শোনা যায়নি। এর আগে ধস নামার ফলে দার্জিলিংয়ে যাতায়াতের কিছু রাস্তা বন্ধ হলেও শৈলশহরে শুক্রবার রাতের মতো দুর্যোগ এর আগে হয়েছে বলে তেমন কেউ মনে করতে পারছেন না।দার্জিলিং নিয়ে গত তিন-চার মাসে পর পর দু’টি মামলা হয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতে (এনজিটি)। তার একটি হলো, শহর জুড়ে যত্রতত্র নির্মাণ নিয়ে। নির্মাণ থেকে বাদ পড়েনি টাইগার হিলের মতো সংরক্ষিত বনাঞ্চলও। আর দ্বিতীয় মামলায় দার্জিলিং শহরের জঞ্জাল পাহাড়ের ঢালে যে জমিয়ে রাখা হচ্ছে, সে কথা জানানো হয়েছে।
পরিবেশবিজ্ঞানীদের অনেকের আশঙ্কা, এমন অপরিকল্পিত নির্মাণে রাশ না-টানলে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না-করলে দার্জিলিং শহরে ধসের প্রবণতা উত্তরোত্তর বাড়বে। সম্প্রতি পরিবেশ আদালতে দার্জিলিং নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে যখন রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি সওয়াল করছেন, সেই সময়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি বি অমিত স্থালেকর মন্তব্য করেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সবই জানি। স্বচক্ষে দেখেও এসেছি দার্জিলিংয়ে, কী হচ্ছে। ফলে, এটা নিয়ে অবিলম্বে ভাবা না-হলে পরিণতি ভালো হবে না।’
টাইগার হিল এলাকায় নির্মাণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতির কথা জানিয়ে দু’টি মামলাই করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি দার্জিলিংয়ে গিয়ে সরেজমিনে খোঁজখবর করেন, তার পর পরিবেশ আদালতে মামলা করেন নথি ও নিজের তোলা ছবি জমা দিয়ে। মামলায় জানানো হয়েছে, টাইগার হিল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। অথচ বাণিজ্যিক নির্মাণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সেই এলাকাও।
যদিও মামলা হওয়ার পরে কোর্টের নির্দেশে আপাতত সেই নির্মাণ বন্ধ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর পাশাপাশি শৈল শহরের আরও এক বিপদ যে ওত পেতে ছিল, তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার রাতেই। ধস নামল দার্জিলিং শহরে। দার্জিলিং ১৭৪ বছরের পুরসভা। শহরের জনসংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তার উপর রয়েছে বছরভর লাখো পর্যটকের আনাগোনা।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত দার্জিলিং পুরসভার নির্দিষ্ট কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ডই তৈরি হতে পারল না। শহর লাগোয়া গ্রামে, পাহাড়ের ঢালে ডাঁই করে ফেলে রাখা হচ্ছে দার্জিলিং শহরের টন টন আবর্জনা। বৃষ্টির জলে সেই জঞ্জাল গিয়ে মিশছে বিভিন্ন পাহাড়ি ঝোরা ও ঝর্নায়। স্তূপ হয়ে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের উপরে পড়ছে মাটির পরত।
পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক থাকায় মাটি যেমন জমাট বাঁধতে পারছে না, তেমনই ভূমি নিশ্ছিদ্র হচ্ছে না। বর্ষার জল চুঁইয়ে মাটিকে আলগা করছে, তার ফলে ধস নামছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ— আগামী দিনে ধসের প্রবণতা আরও বাড়বে।
কী ভাবে নিষ্কৃতি মিলবে এই বিপদ থেকে?
সেটা খুঁজে বার করতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিও গড়ে দিয়েছে আদালত। দার্জিলিং পুরসভার পাশাপাশি হলফনামা তলব করা হয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের কাছেও। কমিটিতে সিনিয়র বিজ্ঞানীদের রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট এবং হলফনামা খতিয়ে দেখে পরবর্তী নির্দেশ দেবে এনজিটি।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অবিলম্বে সুস্থায়ী পরিকল্পনা না-করা হলে আগামী দিনে বড়সড় বিপদের মধ্যে পড়তে পারে গোটা শৈল শহরই।