• কল্যাণীর NIBMG হোক রাজ্যের আর এক কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্য়াব
    এই সময় | ০৭ জুলাই ২০২৪
  • নির্ভয়া গণধর্ষণের পর নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেই ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ফলে, চাপ বেড়েছে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিগুলোর উপর। ডিএনএ-সহ বিভিন্ন ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট সময়ে না-আসায় বহু মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি, আটকে বিচার প্রক্রিয়া। সেখানে আবার নয়া ফৌজদারি আইন কার্যকর হওয়ার ফলে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিগুলোর উপর চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা।নতুন আইনে যে সব মামলায় সাজার মেয়াদ সাত বছর বা তার বেশি, সেই সব ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিচার বিভাগ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষার চাপ সামাল দিতে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের অন্যতম প্রিমিয়ার প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিকেল জিনোমিক্স বা এনআইবিএমজি-কে ঘোষণা করতে হবে সিএফএসএলের সমতুল হিসেবে।

    কেন এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে হাইকোর্ট। এই নির্দেশ কার্যকর করার বিষয়ে আগামী ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব হাইকোর্টকে অবগত করবেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ধর্ষণের মামলার সূত্রে বিচারপতি বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ওই নির্দেশ দিয়েছে।

    কলকাতায় তৈরি হওয়া দেশের প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা সিএফএসএলের কৌলিন্য আর আগের মতো নেই বলে অনেকে মনে করেন। তার উপর ২০১২-র ডিসেম্বরে দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণের পর দেশে আসা নতুন আইনে মহিলাদের উপর শারীরিক অত্যাচার হলেই ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় সিএফএসএলের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে।

    গত বছর রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক প্রশ্নের জবাবে জানায়, ধর্ষণ সংক্রান্ত ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট গুয়াহাটির সিএফএসএলে ১৪২টি, কলকাতায় ১২০টি এবং চণ্ডীগড়ের সিএফএসএলে ১০৯টি পেন্ডিং রয়েছে, অর্থাৎ সেগুলো এখনও পরীক্ষা করা হয়নি।

    হাইকোর্টের বক্তব্য, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৭৬ (৩) ধারা অনুযায়ী, সাত বছর বা তার বেশি মেয়াদের সাজার অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধস্থলের ফরেন্সিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এই পরিস্থিতিতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য মূলত রক্ত ও দেহরস সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণের জন্য কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সকে সিএফএসএল ল্যাব হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং ওই সংস্থায় কর্মরত গবেষকদের দিতে হবে সায়েন্টিফিক এক্সপার্টের স্বীকৃতি।

    হাইকোর্ট মনে করে, আগামী দিনে ফরেন্সিক পরীক্ষার উত্তরোত্তর যে চাপ বাড়বে, তাতে সিএফএসএল ছাড়া ওই সংস্থাই পরিকাঠামো এবং দক্ষতায় এগিয়ে। যদিও একাধিক মামলায় আদালতের নজরে এসেছে যে, ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়ে গেলেও পুলিশ সময় মতো সেই রিপোর্ট সংগ্রহ না-করায় মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

    আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, এমনিতেই মাদক ও নারী নিগ্রহের মামলায় ফরেন্সিক পরীক্ষার চাপ সামাল দিতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে সিএফএসএল-কে। তার উপর বহু মামলার নমুনা পরীক্ষা না-হয়ে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে রিপোর্ট ঠিকঠাক আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

    কলকাতার সিএফএসএল ৩০ এপ্রিল একটি তালিকা প্রকাশ করে। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার পরেও যে সব রিপোর্ট পুলিশ নেয়নি, তার তালিকা। বছর ধরে ধরে কোন বিভাগে এমন রিপোর্ট কতগুলো জমে রয়েছে এবং পুলিশকে তার পর কবে রিপোর্ট নিতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে, তারও উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। মূলত ২০২০ ও ২০২১ সাল থেকে এমন রিপোর্ট পড়ে রয়েছে সিএফএসএলে।
  • Link to this news (এই সময়)