প্রসেনজিৎ মালাকার: আজ দেশ জুড়ে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রথযাত্রার নানা আচারবিধি পুজোপাঠ চলছে। শক্তিপাঠ বলেও রথের আয়োজন হয়েছে তারাপীঠেও। তারাপীঠ মন্দিরেও আজ পূর্ণ মর্যাদায় রথযাত্রা পালিত হচ্ছে। তবে এখানে কিছু আলাদা ব্যাপার রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রথে সাধারণত সওয়ারি হন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। তারাপীঠ মন্দিরের রথে কিন্তু সওয়ারি হন দেবী তারা স্বয়ং!
প্রাচীনকাল থেকেই সেখানে এই নিয়ম চলে আসছে। যেহেতু তারাপীঠে মা তারা একমাত্র অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তাই মা তারাকেই এখানে সর্ব দেবদেবী রূপে পুজো করা হয়ে থাকে। আর বছরের দুটি দিনে মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করা হয়। এক, শুক্লা চতুর্দশীর দিনে আবির্ভাব দিবসে। অন্য দিন আজ, এই রথযাত্রার দিনে। রথযাত্রার দিনে মা তারাকে রথে চাপিয়ে তারাপীঠ এলাকা প্রদক্ষিণ করা হয়। তারপর আবার মাকে মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে আনা হয়। মা তারার এই বিশেষ রথযাত্রা দেখতে তারাপীঠে প্রচুর ভক্তের ভিড় হয়।
তারাপীঠে রথযাত্রার মাহাত্ম্যই আলাদা। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে রথযাত্রা উৎসব নয়, তারাপীঠে তারা মা-ই জগন্নাথের প্রতিভূ। একাধারে তিনিই কালী, তিনিই কৃষ্ণ। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ-- দুই পর্যায়ের রথেই মা তারাই অধিষ্ঠিতা থাকেন।
তারাপীঠের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, আনুমানিক ১৭৮০ সালে নাটোরের রানি ভবানীর দত্তকপুত্র রাজা রামকৃষ্ণ তারাপীঠে রথের প্রচলন করেছিলেন। পরবর্তীকালে কলকাতার আশালতা সাধুখাঁ নামে এক ভক্ত রথঘর নির্মাণ করেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে যার উদ্বোধন হয়েছিল। সেই সময় কাঠের তৈরি একটি রথে তারা মাকে বসিয়ে গোটা চণ্ডীপুর গ্রাম (বর্তমানে তারাপীঠ নামে পরিচিত) প্রদক্ষিণ করানো হত। সেই সময় রথের রশিতে টান দিতে স্থানীয় মানুষ ছাড়াও আশপাশের বাসিন্দারাও ভিড় জমাতেন। হরিনাম সংকীর্তন, বিভিন্ন রকমের বাজনা ও 'জয় তারা' ধ্বনি সহযোগে তারা মাকে রথে চাপিয়ে গ্রাম ঘোরানো হত। সময় যত গড়িয়েছে, তারা মায়ের রথের মাহাত্ম্য ততই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।