পুজো কমিটির দখলদারি নিয়ে বচসা, কাউন্সিলরের দলবলের ‘মারে’ মৃত্যু তৃণমূল কর্মীর
প্রতিদিন | ০৮ জুলাই ২০২৪
অর্ণব দাস, বারাকপুর: পুজো কমিটির দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে বচসার জেরে মর্মান্তিক ঘটনা বারাকপুরে। মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। মৃতের নাম পার্থ চৌধুরী, বয়স ৪৩ বছর। তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের দলবলকেই দায়ী করা হচ্ছে। অভিযোগ, পুজো কমিটির বৈঠকের সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে পার্থবাবুকে মারধর করা হয়েছে। এনিয়ে রবিবার রাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় বারাকপুর পুরসভার ১২ নং ওয়ার্ড এলাকায়। যদিও কাউন্সিলর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতের দিকে, বারাকপুরের (Barrackpore) ওল্ড ক্যালকাটা রোডের সুকান্তপল্লী এলাকায়। মৃত তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী এখানকার একটি ক্লাবের সদস্যা। এই ক্লাবের দুর্গাপূজার (Durga Puja) কমিটি গঠন নিয়ে এদিন সন্ধের পর বৈঠক ছিল। অভিযোগ, পুজো কমিটির দখল নেওয়ার জন্য স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায়, তাঁর স্বামী-সহ দলবল নিয়ে বৈঠকে হাজির হয়। কমিটি গঠনের সময় জোর করে বৈঠক ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ। আর বাইরের দখল নেয় কাউন্সিলরের দলবল। ফলে এলাকা উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এদিকে স্ত্রীকে বৈঠকে আটকে রাখার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন তৃণমূল (TMC) কর্মী পার্থ। তিনি গোটা ঘটনার প্রতিবাদ করলে কাউন্সিলরের অনুগামীদের সঙ্গে তার বচসা বাঁধে। সেই সময় তাঁকে মারধর (Lynching) করা হয় বলে অভিযোগ।
আগের পুজো কমিটির সভাপতি সঞ্চিতা কুমার বলেন, “তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী মুখোপাধ্যায় প্রথমে বলেছিলেন, পুজোয় তিনি থাকবেন না। তার পর এদিন যখন কমিটি গঠন নিয়ে বৈঠক শুরু হয়, সেসময় তাঁর স্বামী-সহ দলবল নিয়ে আসে। কমিটি (Puja Committee)গঠন নিয়ে যখন বৈঠক হচ্ছিল, তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলে, যতক্ষণ না কমিটির তৈরি হবে কেউ বাইরে বেরতে পারবে না। সেই সময় বাইরে গণ্ডগোল বাঁধলে জানতে পারি, পার্থকে মারধর করা হচ্ছে। বেরতে চাইলে আমাকে, এমনকি পার্থর স্ত্রীকেও বেরতে দেয়নি। কমিটি দখল করবে বলেই কাউন্সিলর দলবল নিয়ে এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
তাঁর আরও বক্তব্য, প্রচণ্ড মারধরের ফলে অচৈতন্য হয়ে পড়েন পার্থ। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে বারাকপুর বিএন বসু মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান বারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান (Chairman) উত্তম দাস। তাঁর কথায়, “পুজো কমিটি গঠন নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে এসে শুনলাম, মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল দলের এক কর্মীকে। তবে তাঁর শরীরে বাহ্যিক কোনও আঘাত পাওয়া যায়নি। হয়ত মারামারিতেই হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট (PM Report) পাওয়ার পরেই সঠিক কারণ জানা যাবে। ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। প্রশাসন তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।” এই ঘটনায় স্বভাবতই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। বিশেষ করে কাউন্সিলরের দলবলের হাতে প্রহৃত হয়ে দলেরই কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে সরগরম এলাকা।