নদী ভাঙনে আশঙ্কার মেঘ, বিপদে চা-সুন্দরী প্রকল্পের ৪০০ শ্রমিক
এই সময় | ০৮ জুলাই ২০২৪
এই সময়, আলিপুরদুয়ার: বিপদে চা-সুন্দরী! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের চা-সুন্দরী প্রকল্পে মাদারিহাট ব্লকের মুজনাই চা-বাগানের ৪০০টি নির্মীয়মাণ শ্রমিক আবাসনকে যেন গিলে খেতে আসছে শুখা নদী। চা-বাগানের পতিত জমিতে ওই আবাসন প্রকল্পটি তৈরির আগে কেন নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়নি, সে প্রশ্ন উঠেছে।চা-সুন্দরী প্রকল্পে তোর্সা চা-বাগান এবং ঢেকলাপাড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের ইতিমধ্যেই আবাসন হ্যান্ড ওভার করা হয়েছে। কিন্তু মুজনাই চা-বাগানে শ্রমিক আবাসনের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায়, সেখানে চা-শ্রমিকেরা থাকতে শুরু করেননি। সেই আবাসনগুলিই এখন বিপর্যয়ের মুখে। শ্রমিকদের পানীয় জল সরবরাহের জন্যে সেখানে যে পাকা জলাধার তৈরি হচ্ছে, তা থেকে শুখা নদীর দূরত্ব তিন মিটারের বেশি নয়। অর্থাৎ ভাঙন কেড়ে নিতে পারে শ্রমিকদের মাথার ছাদ, তৃষ্ণার জল।
সপ্তাহখানেক ধরে আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রতিদিন ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী সাত দিনেও আবহাওয়ার উন্নতির কোনও বার্তা দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। তাতে বিপদের আশঙ্কা আরও বেড়েছে চা-সুন্দরীর। ভাঙন আটকানোর জন্যে জেলা প্রশাসনের তরফে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। সেই সব বালির বস্তা টপকেই প্রতিদিন শুখা নদী এগিয়ে আসছে নির্মীয়মাণ আবাসনগুলির দিকে।
এই প্রকল্পে একএকটি বাড়ি তৈরির জন্যে রাজ্য সরকার বরাদ্দ করেছে পাঁচ লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার টাকা। খুব তাড়াতাড়ি যদি বাঁধ নির্মাণ শুরু না হয়, তবে ২১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বিজেপি সাংসদ ও মাদারিহাটের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ টিগ্গা অবশ্য এ জন্য জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শুখা নদীর বিপদ নিয়ে আগেই জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা কেউ কানে তোলেননি। জেলা প্রশাসন কিছু মুনাফাখোরদের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করেছে। যা দুর্ভাগ্যজনক।’ বিষয়টি নজরে আসা মাত্রই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন।
জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, ‘ওই নদী ভাঙন রুখতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের আবাসন দপ্তর বাঁধ নির্মাণের জন্যে ৩৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। ওই টাকায় বাঁধ তৈরির কাজ করবে জেলা সেচ দপ্তর।’ মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি জয়প্রকাশ টোপ্পো বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের উন্নয়নের প্রশ্নে মুজনাই চা-বাগানে কাজ করছে রাজ্য সরকার। নদী ভাঙনের সমস্যা যেমন আছে, সেখানে বাঁধ দেওয়ার প্রাথমিক কাজও তো শুরু করেছে প্রশাসন। এত গেল গেল রব তোলার কোনও মানে নেই।’
তবে ভরা বর্ষায় ঠিক কীভাবে বাঁধ তৈরির কাজ হবে, সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকায়। মুজনাই চা-বাগানের সমাজকর্মী বিকাশ ওঁরাও বলেন, ‘প্রথমে যখন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়, তখনই আমরা লিখিত ভাবে আপত্তি জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম আগে বাঁধ দিয়ে, তারপর কাজ শুরু করা হোক। কিন্তু তাতে আমল দেওয়া হয়নি। এখন আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়ে গেল। যে ভাবে বর্ষা চলছে, তার মধ্যে ঠিক কীভাবে বাঁধ তৈরি করা হবে, তা বোধগম্য হচ্ছে না।’