৬ বছর পর হল অঙ্গরাগ, রথে বিষ্ণুপুরে শুরু মা মৃন্ময়ীর আরাধনা
প্রতিদিন | ০৮ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: ছয় বছর পর বিষ্ণুপুরে প্রাচীন মল্ল রাজাদের আরাধ্যা দেবী মৃন্ময়ীর অঙ্গরাগ হল। এই উপলক্ষে গত প্রায় এক মাস বাইশ দিন মা মৃন্ময়ীর পুজো-অর্চনা বন্ধ ছিল। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের তৎকালীন রাজা জগৎ মল্ল প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটির তৈরি দেবী মৃন্ময়ীর অঙ্গরাগের পর দেবী মূর্তির দর্শনে রবিবার রথযাত্রার সকালে ভিড় জমান পূণ্যার্থীরা। রবিবার সকাল থেকেই প্রাচীন নিয়ম নীতি মেনেই পুজো অর্চনা শুরু হয়েছিল। বাঙালি সাজে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিগ্রহ দর্শন করে মায়ের পুজো দেন। মন্দির চত্বরে ভক্তদের জন্য পোলাও, পনির মশলা, পাঁচ রকমের ভাজা, আলু কারী, পটলকারী, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি ভোগ বিতরণ হয় ভক্তদের মধ্যে।
দেবী মৃন্ময়ীর পুরোহিত সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দেবীকে নতুনভাবে রাঙিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন রঙে। এবার ১ মাস ২২ দিন সময় বন্ধ ছিল মায়ের দর্শন। সেইসময় প্রথা মেনেই বহিরাগতদের পুজো দেওয়ার নিয়ম নেই। দেবী দর্শনও থাকে বন্ধ। পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল দেবীর থান। বংশ পরম্পরা ধরে যাঁরা দেবীর অঙ্গরাগ করে থাকেন এবারও তাঁরাই মৃন্ময়ী মাকে নতুনভাবে রঙ করেছেন।’’ জানা গিয়েছে, স্বপ্নাদেশ ছাড়া এখানে দেবীর অঙ্গরাগ হয় না। তা পাঁচ বছর হতে পারে আবার ৮-১০ বছর পরেও হতে পারে। রবিবার, রথের দিন থেকে ফের পুণ্যার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ের বিগ্রহ দর্শন শুরু হয়েছে।
বিষ্ণুপুর রাজপরিবারের বর্তমান বংশধর সম্রাট সিংহ ঠাকুর বলেন, ‘‘রথের সকালে মায়ের স্নান, অধিবাস, বরণ, হোম, চণ্ডীপাঠ, পুজো, আরতি, ভোগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ হাজার ২৬ বছরের প্রাচীন এই দেবীর মূর্তি পুজো আমাদের পূর্বপুরুষরা যে, যে নিয়ম মেনে করে আসতেন ঠিক সেই মতোই আমরাও পুজোর সবকিছু করেছি। আজ, সকাল থেকেই ধুমধামের সঙ্গে মাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হল। মায়ের স্বপ্নাদেশ ছাড়া এই অঙ্গরাগ হয় না।’’ বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা করবী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘ একমাস ২২ দিন বন্ধ ছিল মায়ের বিগ্রহ দর্শন। যার ফলে এতদিন মায়ের দর্শন হয়নি। আজ সকাল থেকে মায়ের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মাকে ফের পুজো দিতে পারব।’’ এদিন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ মৃন্ময়ী মায়ের পুজো দিতে এসে বলেন, ‘‘অঙ্গরাগের জন্য এক মাস বাইশ দিন মায়ের দর্শন বন্ধ ছিল। মায়ের অঙ্গরাগের পর রথের সকালে মাকে দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই কারণে মায়ের আশীর্বাদ নিতে এবং বিষ্ণুপুরবাসীর মঙ্গল কামনায় পূজো দিলাম এখানে। বিষ্ণুপুরকে কেন্দ্রীয় সরকার সাজিয়ে তুলছে তাই সুষ্ঠুভাবে সব কাজ হচ্ছে। রাজবাড়ী তাঁর একটি ট্রাস্ট করুক আমরা সর্বতভাবে সহযোগিতা করব।’’