• ‌মায়ের ব্যস্ততায় বাড়ছে জলে ডুবে শিশু মৃত্যু, আটকাতে গ্রামে লড়ছে ‌‘‌কবচ’‌...
    আজকাল | ০৯ জুলাই ২০২৪
  • বিভাস ভট্টাচার্য:‌ একটু চোখের আড়াল। তাতেই ঘটে যায় সর্বনাশ। পুকুরে বা জলে ডুবে যায় আদরের বাছা। হা, হুতাশ, কান্না। ভারী হয় বাতাস। কিন্তু আর কিছুই করার থাকে না। একটা ঘটনা নয়। দিনের পর দিন বা মাসের পর মাস গ্রামবাংলায় এটাই ঘটে আসছে। সাময়িক সতর্কতা। তারপর আবার যে কে সেই। 

    দেখা গিয়েছে বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরত্বের মধ্যে এই জলে ডোবার ঘটনাগুলি ঘটছে। রাজ্যে এই নিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউট বা সিনি’‌র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য। তারা গত কয়েক বছর ধরেই এই বিষয়ে অনুসন্ধান এবং দুর্ঘটনা আটকাতে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অফিসার সুজয় রায় জানান, ‘‌শিশুদের এই জলে ডোবার সময়টা হল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত। কারণ, এই সময়ে তাদের মায়েরা খুব ব্যস্ত থাকেন। রান্না বা ঘরের কাজের জন্য তাঁদের অনেকটাই সময় দিতে হয়।’‌ 

    বিষয়টির গোড়ায় পৌঁছতে সংগঠনের তরফে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এলাকায় অনুসন্ধান শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলা, আলিপুর স্বাস্থ্য জেলা এবং বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা। আশা ও অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের থেকে সংগ্রহ করা হয় তথ্য। দেখা যায় পুকুর বা ডোবার পাশাপাশি হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চা বাড়িতে রাখা বালতির জলে ডুবেও মারা গিয়েছে। সিনির তরফে যোগাযোগ করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘‌হু’‌র সঙ্গে। কীভাবে এটা আটকানো যায় সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ছাড়াও সহযোগিতার আশ্বাস দেয় হু। আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। কাজ শুরু হয় কুলতলি, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমায়। তৈরি হয় ‘‌কবচ’‌ নামে সেন্টার। যেখানে দিনের যে সময়টা মায়েরা ব্যস্ত থাকেন সেইসময় বাচ্চাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সুজয় রায় জানান, ‘‌সেন্টারগুলিতে ২০ জন করে শিশু রাখা যায়। এদের বয়স ১ বছরের উর্ধ্বে কিন্তু ৫ বছরের নিচে। এই শিশুদের দেখাশোনা করে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। একজন করে মহিলা প্রতি ৬ জন শিশুর দেখাশোনা করেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত বিষয়টি খেয়াল বা ‘‌মনিটরিং’‌ করে।’‌ 

    এর পাশাপাশি যেখানে যেখানে বাড়ির পাশে জলাশয় আছে সেই জলাশয়গুলিতে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সিনি জানিয়েছে, এই ব্যবস্থা নেওয়ার পর উল্লেখযোগ্যভাবে ওই এলাকাগুলিতে কমতে শুরু করেছে জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা। 

    সুজয় রায় জানান, ‘‌একদিকে যেমন শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করা যাচ্ছে তেমনি আটকানো যাচ্ছে বহুবিবাহও। দেখা গিয়েছে কোনও দম্পতির একটি মাত্র পুত্রসন্তান এবং মা বন্ধ্যাত্বকরণ করিয়ে নিয়েছেন। কোনওভাবে ওই শিশুটির মৃত্যু হলে দম্পতির সামনে যখন আর শিশুসন্তান লাভের সুযোগ থাকে না তখন বহুক্ষেত্রে মহিলার স্বামী সন্তান লাভের জন্য আরেকজন মহিলাকে বিয়ে করছেন। যার ফলে তার আগের পক্ষের স্ত্রী সমস্যায় পড়ছেন।’‌ 

    ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্য জুড়ে এবিষয়ে কাজ শুরু করেছে সিনি। আগামী ২২ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকার ও হু’‌র প্রতিনিধি দল সুন্দরবন এলাকায় কবচ বা শিশুমৃত্যু আটকাতে সিনির নেওয়া পদক্ষেপগুলি দেখতে আসছেন বলে জানিয়েছেন সুজয় রায়। পদক্ষেপগুলি মডেল হিসেবে তারা বাকি রাজ্যগুলিতেও দেখাতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
  • Link to this news (আজকাল)