জঙ্গলমহলে হামলা থেকে বাঁচতে হাতিদের অভিনব নামকরণ গ্রামবাসীদের
এই সময় | ০৯ জুলাই ২০২৪
কেউ শান্ত স্বভাবের, তো কেউ আবার খুবই আক্রমণাত্মক। কেউ আবার মানুষ দেখলেই তেড়ে আসে, কেউ আবার মানুষ দেখেও নিজের খেয়ালেই থাকে। এখানে যাদের কথা বলা হচ্ছে যেমন বলা যেতে, তারা অবশ্য কেউ মানুষ নয়, প্রত্যেকেই জঙ্গলমহলের হাতি। কোনওটা রেসিডেন্সিয়াল, তো কোনওটা আবার দলছুট। যেমন জঙ্গলমহলের রেসিডেন্সিয়াল হাতি রামলালের মতো প্রায় ৮ থেকে ১০ টি হাতি দলছুট হয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই এই সমস্ত হাতিগুলির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে অভিনব উদ্যোগ গ্রামবাসীদের। হাতির স্বভাব চরিত্র ও হাতির গঠন অনুযায়ী প্রায় আট থেকে দশটি হাতির নামকরণ করা হয়েছে। এই নামকরণ গ্রামের মানুষই করেছে। ফলস্বরূপ এলাকায় কোন হাতি ঢুকেছে, ও সেই হাতি এলাকায় কী ক্ষতি করতে পারে বা সেই হাতিকে এলাকা থেকে তাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা সহজেই বুঝে নিচ্ছে গ্রামবাসীরা। রামলাল, প্রেমলাল, কালিঙ্গ, কানরকারবী সহ বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে হাতিদের।এই বিষয়ে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের শালবনি গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর মাহাতো বলেন, 'ঝাড়গ্রাম ও লোধাশুলি রেঞ্জের এইটুকু এলাকা এখন হাতিদের বাসস্থান হয়ে উঠেছে। একটি দুটি নয়, প্রায় ৮ থেকে ১০ টি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে কখনও দিনের বেলায়, কখনও বা রাতের অন্ধকারে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। মাটির ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের জীবনেরও কোনও নিরাপত্তা থাকছে না। হাতি ঢুকলেই চাউর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী ধরনের হাতি তা আমরা কেউ জানতে পারছি না। তাই আমরা হাতির স্বভাব, চরিত্র ও আকৃতির উপর নির্ভর করে সেগুলির নামকরণ করেছি। ফলে আমরা সহজে বুঝতে পারছি কী ধরনের হাতি এলাকায় ঢুকেছে ও সেটি এলাকায় কেমন ক্ষতি করতে পারে। হাতি নামকরণের ফলে আমরা সহজেই হাতিকে চিহ্নিত করে এলাকা ছাড়া করতে পারছি ও নিজেদের নিরাপদে রাখতে পারছি।'
হাতিদের নামকরণ গ্রামবাসীদের
শ্যামসুন্দরের কথায়, যদি রামলাল এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে মানুষ নিশ্চিন্তে থাকে যে সেটি কেবলমাত্র খাবারের সন্ধান করবে কিন্তু কোনও মানুষের উপর আক্রমণ করবে না। আবার যদি এক দাঁতা বা ফগলু নামের হাতিটি এলাকায় ঢোকে তাহলে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তার কারণ এই হাতিটি মানুষ দেখলেই তেড়ে যায়। এই ভাবেই একাধিক হাতির নামকরণ করে নিজেদেরকে সুরক্ষিত করছে গ্রামবাসীরা। শ্যামসুন্দর আরও জানান, পুরুষ হাতি ও স্ত্রী হাতীদেরকে চিহ্নিত করে তাদের নাম করা হয়েছে। যেমন, পুরুষ হাতিদের মধ্যে রয়েছে রামলাল, প্রেমলাল, জুরিলাল, শ্যামলাল, ফগলু বা এক দাঁতা, কালিঙ্গা। এর মধ্যে রামলাল সবচেয়ে শান্ত স্বভাবের। মানুষের ভিড়, পটকা, মশাল এইসব কোন কিছুই সে তোয়াক্কা করে না। দিন হোক বা রাত, যে কোনও সময় এলাকায় ঢুকে পড়ে খাবারের সন্ধানে। কিন্তু মানুষের উপর সে কখনও আক্রমণ করে না। কখনও কখনও রাস্তায় গাড়ি আটকেও খাবারের খোঁজ করে।
রাস্তার মাঝে হাতি
আবার প্রেমলাল, জুরিলাল ও শ্যামলাল, এই তিনটি হাতিকে প্রায় একইরকম দেখতে। তিনটেই রামলালের তুলনায় আকারে একটু কম। রয়েছে মাঝারি আকারের দাঁতও। এই তিনটি হাতি আবারা মানুষের ভিড়, পটকা ও মশালকে ভয় পায়। রামলাল এর মতো এই তিনটি হাতি শান্ত স্বভাবের নয়। মাঝেমধ্যে মানুষের উপর আক্রমণ করে। কখনও আবার মানুষ দেখলে তেড়েও আসে। এরপর রয়েছে কালিঙ্গা। এটির দাঁত সবচেয়ে বড়। এই হাতিটি শান্ত স্বভাবের হলেও মানুষ বিরক্ত করলে তাড়া করে। এরপর রয়েছে ফগলু বা এক দাঁতা হাতি। এই হাতিটি সবচেয়ে আক্রমণাত্মক স্বভাবের। মানুষের বিন্দুমাত্র আওয়াজ পেলেই সেই আওয়াজকে অনুসরণ করে তেড়ে আসে। রাতের অন্ধকারে কেউ টর্চ জ্বাললেও সেই আলোকে অনুসরণ করে তেড়ে যায়। তাই এই হাতিকে দেখলেই সতর্ক ও সাবধান হয়ে যায় এলাকার মানুষজন।
এছাড়া রয়েছে স্ত্রী হাতিও। এই হাতিগুলি ছোট ছোট হাতির দলকে নেতৃত্ব দেয়। যেমন রয়েছে কানকাবরী, ডি জে সার্জেন, লেজ ঠুঁটো মাদি বা লেজ কাটা। তবে এই তিনটিই আক্রমণাত্মক স্বভাবের হাতি। কানকাবরী নামের মাদি হাতির কানে সাদা দাগ রয়েছে। তাই এটির এমন নামকরণ। ডি জে সার্জেন নামের এই হাতিটি আবারা কাউকে আক্রমণ করলে সঙ্গে খুব জোরে চিৎকারও করে। আবারা লেজ কাটা থাকায় একটি হাতির নাম দেওয়া হয়েছে লেজ ঠুঁটো মাদি বা লেজ কাটা।