• ইমানদার বনাম দল-বদলুদের লড়াই রায়গঞ্জ উপনির্বাচনে
    এই সময় | ০৯ জুলাই ২০২৪
  • রণবীর দেব অধিকারী, রায়গঞ্জ

    বছরখানেক আগেও তাঁরা ছিলেন সহযোদ্ধা। এখন দু'জনেই বিপরীত শিবিরে। যুদ্ধটা তাই মুখোমুখি। একজন পদ্ম ছেড়ে হাতে নিয়েছেন ঘাসফুল। অন্যজন, ঠিক তার উল্টো। একজন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়পাত্র, রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে জোড়াফুলের প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। অন্যজন, শুভেন্দু অধিকারীর স্নেহধন্য বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষ।হাওয়া বুঝে ফুল বদল করা এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কামান দেগেছেন রাজনীতিতে পোড় খাওয়া কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। তিনি দু'বারের বিধায়ক শুধু নন, উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতিও বটে। সোমবার শেষ দিনের প্রচারে কুলিক পাড়ের শহরে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো, দুই প্রার্থীর ভোট ভাগ্যে 'দল-বদলু' তকমা আদৌ কোনও প্রভাব ফেলবে?

    প্রশ্নটা ঘুরছে, কারণ দুই ফুলের বিরুদ্ধে যিনি জেহাদ ঘোষণা করে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁর গায়ে এই 'দল-বদলু' তকমা নেই। ইদানীং ধারে একটু কম কাটলেও, ভারে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর তুলনায় দু'কদম এগিয়ে। তাঁর ডানে, বাঁয়ে থাকা নেতারা একে একে হাত ছেড়ে চলে গেলেও মোহিত নিজের রাজনৈতিক আদর্শে অবিচল থেকেছেন। একা কুম্ভ হয়েই রায়গঞ্জে আগলে রেখেছেন কংগ্রেসের দুর্গ।

    সাধারণ মানুষ তো বটেই, ঘোর বিরোধীরাও তাঁকে সমীহ করেন এই একটা কারণে। দলের কর্মীরা বলেন, 'শত প্রলোভনেও মোহিতদা কংগ্রেসের ভঙ্গুর হাত ছেড়ে কখনও অন্য দলে যাননি। এ বারের উপনির্বাচনে এই 'ইমানদার' ইমেজটাই তাঁর সবচেয়ে বড় পুঁজি।' ভোটপ্রচারে মোহিত তাই বলছেন, 'একদিকে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, অন্যদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল। এই দুই দলের প্রার্থীই রাজনীতি করেন নিজের স্বার্থে। তাঁরা ভোটে জিতলে চলে যান অন্য দলে। রায়গঞ্জের উন্নয়ন বা কাজ নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই।'

    অন্য দুই প্রার্থী অবশ্য মোহিতের ওই অভিযোগকে তেমন আমল দিচ্ছেন না। ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলেও তাঁদের দাবি। মানস বলেন, 'বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল বদল করতে হয়েছিল। এখন তৃণমূল সরকারের পতন চাইছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। সেটা করে দেখাতে পারবে বিজেপি।' তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীর বক্তব্য, 'আমি রায়গঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সেটা একমাত্র তৃণমূলে থেকেই করা সম্ভব।'

    ২০২১-এ রায়গঞ্জ বিধানসভার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে হারিয়ে পদ্ম প্রতীকে জয়ী হন কৃষ্ণ কল্যাণী। বিধায়ক হওয়ার মাস তিনেক পরেই তিনি পদ্ম ছেড়ে জোড়াফুলের বাগানে ঢুকে পড়েন। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি যেতে ব্যর্থ সেই প্রার্থীকে উপনির্বাচনে মাঠে নামিয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষ ছিলেন তৃণমূলে। রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি পদ সামলেছেন ৫ বছর। সেই মানস আবার ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে যোগ দেন পদ্মে।
  • Link to this news (এই সময়)