• পুকুরেই বোরোলি বড় করে পুরস্কার পাচ্ছেন সমীর
    এই সময় | ০৯ জুলাই ২০২৪
  • জয়পুরের মহারানি, কোচবিহারের রাজকন্যা ইন্দিরা দেবী থেকে শুরু করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু — এক্ষেত্রে এক বন্ধনীতে বসে যাবেন। বাদ পড়বেন না ছাপোষা হরিপদ কেরানিও। উত্তরবঙ্গের বোরোলি মাছের আকর্ষণ এমনই। একবার খেয়েছেন অথচ এ মাছে মজেননি, এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। শিলিগুড়ির মহার্ঘ পাইস হোটেলগুলির জনপ্রিয় পদ, কাঁচালঙ্কা বোরোলির স্বাদও মুখে লেগে আছে অনেকের।কিন্তু ইলিশের মতো ‘উত্তরবঙ্গের ইলিশও’ যে ক্ষণস্থায়ী। নদীর মিঠে জলে বোরোলির সংসার। তবে বহু গবেষণার পরে পুকুরে ইলিশ চাষ করা যাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের পুকুরে দিব্যি বাড়ছে সুস্বাদু ইলিশ। এবার বোরোলি মাছও পুকুরে চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কোচবিহারের সমীরকুমার দত্ত। সে বোরোলি স্বাদেও খাসা।

    এই কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃত হচ্ছেন সমীর। আগামিকাল, বুধবার জাতীয় মৎস্যচাষি দিবসে সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিসারিজ় রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিফরি) দেশের ১০ জন মৎস্যচাষিকে পুরস্কৃত করবে। বাংলা থেকে সেই তালিকায় রয়েছেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের সমীর। গত কয়েক বছরে তিনি পুকুরে বোরোলি চাষে হাত পাকিয়েছেন। ইলিশের মতো পুকুরে বোরোলি চাষ নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চলছিল।

    রাজ্য এবং কেন্দ্রের সংস্থা তাঁকে এই কাজে নানা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছে। তবে বড় করা গেলেও পুকুরে বোরোলির ডিম ফোটানো যায়নি। সমীরের এখন চ্যালেঞ্জ সেটাই। ১৯৮২ সালে সমীর যখন নিজের ছোট্ট জলাশয়ে মাছের ডিমপোনা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, তখন উত্তরবঙ্গে সে কাজ হতোই না। এখন সেই সমীরের কার্যত মাছের ভুবন।

    ১২০ বিঘা বিস্তৃত ছোট-মাঝারি জলাশয়ে নানা জাতের মাছ এবং চারা তৈরি হচ্ছে। তারই মধ্যে বিঘা দেড়েক জমিতে বোরোলির সংসার। ইলিশের মতোই নদীর স্রোতের বিপরীতে ঝাঁক বেঁধে চলে বোরোলি। মূলত বর্ষার আগেই এপ্রিল-মে মাসে কিংবা বর্ষার পরে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এদের দেখা মেলে।

    জলঢাকা, কালজানি, তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা, রায়ডাক— উত্তরবঙ্গের এই নদীগুলিতেই বোরোলি মেলে। প্রতিটি নদীর ক্ষেত্রেই মাছের স্বাদ একটু হলেও আলাদা। খাদ্যরসিক থেকে মৎস্যজীবী— মোটামুটি একমত যে, স্বাদে-গন্ধে রায়ডাকের বোরোলিই সবার সেরা। ক্রমাগত নদীর জলে কীটনাশক প্রয়োগ, জল দূষণ, বিদ্যুতের শক দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে মাছ ধরার প্রবণতা গত কয়েক দশকে বোরোলির সংসারে সঙ্কট ডেকেছে।

    সিফরির পক্ষ থেকে সুজিত চৌধুরী বলেন, ‘বোরোলির মতো মাছ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন সমীর। সেই জন্যই তিনি পুরস্কৃত হচ্ছেন।’ এ দিকে সমীরের কথায়, ‘রাজ্য মৎস্য দপ্তর এবং সিফরির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গোরুবাথানে পাহাড়ের ঢালের উপরে নদীতে যেখানে বোরোলি ডিম পাড়ে, সেখান থেকে মিন সংগ্রহ করে পুকুরে চাষ শুরু করি। পুকুরে কৃত্রিম স্রোত তৈরি করে, অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রেখে স্বাভাবিক খাবার দিয়ে বোরোলি বড় করতে অসুবিধা হয়নি।’

    কিন্তু সমীর এখনও যেটা পারেননি, তা হলো পুকুরে বোরোলির ডিম ফোটানো। প্রাকৃতিক স্রোত ছাড়া তা অসম্ভব, মনে করেন না সমীর। তিনি বলেন, ‘আমার এক পরিচিত চাষি একবার তা করেছিলেন। পরে আর পারেননি। তবে সেটা আবার করা সম্ভব বলেই আমার বিশ্বাস।’
  • Link to this news (এই সময়)